‘তুদের বিপ্লব শেষ’ বলেই পেটানো হয়, হাসপাতালে কাতরাচ্ছে রিদুয়ান সিদ্দিকী
নিজস্ব সংবাদদাতা
০৪ জুলাই, ২০২৫, 11:27 AM

নিজস্ব সংবাদদাতা
০৪ জুলাই, ২০২৫, 11:27 AM

‘তুদের বিপ্লব শেষ’ বলেই পেটানো হয়, হাসপাতালে কাতরাচ্ছে রিদুয়ান সিদ্দিকী
মোরশেদ আলম, পটিয়া: চোখ বন্ধ করলেই বারবার ভেসে উঠছে সেই ভয়াল রাতের দৃশ্য—স্লোগানের গর্জন, আর হঠাৎ পুলিশের বর্বর লাঠিচার্জ।
পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রিদুয়ান সিদ্দিকী এখন চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। সারা শরীর জখম, মাথায় গুরুতর আঘাত। চিকিৎসকরা বলছেন, তার সুস্থ হতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে।
ঘটনার শুরু ১ জুলাই রাতে। পটিয়া থানার মোড়ে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা অবস্থান নেন। সেখানে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ নেতা দীপংকর দে-কে দেখে তাকে পুলিশে সোপর্দের চেষ্টা করেন তারা। তবে ওসি জায়েদ নূর গ্রেফতার করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ক্ষুব্ধ ছাত্ররা দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্লোগান শুরু করেন।
সেই সময়, প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ওসি জায়েদ নূরের নেতৃত্বে শুরু হয় পুলিশের পৈশাচিক লাঠিচার্জ।
লাঠির আঘাতে অন্তত ১২ জন ছাত্র আহত হন। তাদের মধ্যে তৌকির ও সাইফুল ইসলামের অবস্থা ছিল গুরুতর।
তবে এখানেই থামেনি পুলিশি বর্বরতা। প্রথম দফার লাঠিচার্জের পর আহত ছাত্ররা সাংবাদিকদের সঙ্গে থানার সামনে প্রেস ব্রিফিং করতে গেলে ফের শুরু হয় পুলিশি হামলা। চট্টগ্রাম জেলা রিজার্ভ পুলিশ ও পটিয়া থানার পুলিশ একযোগে লাঠিচার্জ চালায়। সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি এই দফায়। সাংবাদিকদের মধ্যে দৈনিক সময়ের আলোর মোরশেদ আলম, কর্ণফুলি পত্রিকার ওসমান গনি আহত হন। ঠিক তখনই সবচেয়ে নির্মমতার শিকার হন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা রিদুয়ান সিদ্দিকী।
রিদুয়ান সিদ্দিকী বলেন, “আমাকে ‘আন্দোলনের মূল হোতা’ বলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘিরে ধরে। একটার পর একটা লাঠির আঘাত, বুটের লাথি, রাইফেলের বাট—কিছুই বাদ যায়নি। রক্তাক্ত হয়ে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।”
পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাথায় মারাত্মক জখম, সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত। এছাড়া সাইফুল ইসলাম, সাঈদুলসহ আরও ৪/৫ জন ছাত্রকে গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরদিন, ২ জুলাই সকালে পটিয়া থানার সামনে অবস্থান নেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বাইপাস মডেল মসজিদের সামনে মহাসড়ক অবরোধ করেন ছাত্ররা।
চার দফা দাবি তুলে ধরে দিনভর চলে বিক্ষোভ।
পরে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক দফা বৈঠক হয়। সন্ধ্যায় দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন ছাত্ররা। এরপর রাতেই বিতর্কিত ওসি জায়েদ নূরকে প্রত্যাহার করে ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয় এবং যুযিৎসু যশ চাকমাকে নতুন ওসি হিসেবে পটিয়া থানায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে রিদুয়ান সিদ্দিকী বলেন, “ওসি জায়েদ নূর পটিয়ায় আসার পর থেকে মামলা বাণিজ্য চালাতো। জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সময় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কাউকে গ্রেফতার করেনি। বরং যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত, তাদেরই হয়রানি করত। আমার অপরাধ একটাই—আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। এই কারণেই আমাকে এভাবে পিটিয়েছে।”
এদিকে এই ঘটনার জেরে আন্দোলন থেমে থাকেনি। চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের পর এবার পুলিশের সংস্কার সহ ৪ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) বিকাল ৩টায় ষোলশহরে তিন সংগঠনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আন্দোলনের ঘোষণা দেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জুবাইর হাসান।