ঢাকা ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
দক্ষিণ ভূর্ষি শীতলা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাঞ্চন নাথ, সম্পাদক সুমন দেবনাথ “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা: ছাত্রদল কমিটিতে ‘শিবির সংশ্লিষ্টতার' অভিযোগ পটিয়ায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সমন্বয় সভা পটিয়ায় ভূমি অফিসে দালালবিরোধী অভিযান, এক যুবকের সাজা ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৪২ পটিয়ায় একই দিনে অজ্ঞান পার্টির প্রতারণা ও দরজা কেটে ১৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে স্বর্ণালংকার- নগদ টাকা হারালেন বৃদ্ধা পটিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় দুই চুরি, এক আত্মহত্যা : চরম উৎকন্ঠায় স্থানীয়রা

সিলেটে বন্যাকবলিত মানুষের অসহাত্বের যে খণ্ডচিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে তা হৃদয়বিদারক, অবর্ণনীয়

#

২৪ জুন, ২০২২,  5:26 PM

news image

নজরুল ইসলাম II বন্যা শুধু প্রাকৃতিক বিপত্তি বা বিপর্যয় নয়, অর্থনীতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ও বটে। তাই বন্যা ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির সঙ্গে অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের প্রয়োগ দরকার। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি আমাকে বাকরুদ্ধ করেছে। বন্যা যেহেতু বাংলাদেশে একটি নৈমিত্তিক দুর্বিপাক, তাই বন্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে টেকসই বন্যা ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দেওয়া একান্ত জরুরি। সিলেটে বন্যাকবলিত মানুষের অসহাত্বের যে খণ্ডচিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে তা হৃদয়বিদারক, অবর্ণনীয়। বন্যার কারণে বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আবার বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য নদ-নদীর খনন এবং বাঁধ নির্মাণের নামে ব্যাপকভাবে অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু তেমন কোনো দৃশ্যমান ফলাফল চোখে ভাসছে না।

আমার ইউনিভার্সিটি বন্দু চাটার্ড একাউন্টেন্ট তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা। স্বপরিবারে ঢাকায় বসবাস করেন। সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি সুদূর লন্ডন থেকে দেখে বাবুলের সাথে ফোনে কথা হয় ঢাকায়। প্রিয় বাবুলের বয়জোষ্ঠ মতাময়ী মা ও পরিবারের খবর জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাবুল বলেছেন, পরিবারের কারো সাথে কোন ভাবেই যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না। মা সহ পরিবারের সবাই কেমন আছেন কিভাবে আছেন একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। মাকে দেখার জন্য বা উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে ইতিমধ্যে। এয়ার হেলিকপ্টার ভাড়া করে যেতে চেয়েছিলাম বিধি নিষেদের কারণে তাও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। নিজেকে বড়ই অসহায় মনে হচ্ছে, এখন একমাত্র আল্লাহ ভরসা। পাঠক, মাঝে মধ্যে মনে হয় এই রাষ্টের নাগরিক হিসাবে আমাদের বসবাস অনিশ্চয়তায় আচ্ছন্ন।

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি অবর্ণিনীয়, লক্ষ লক্ষ লোক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎ নেই, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক, জনজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিসহ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের নৌপথের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার। বর্তমানে তা নেমে এসেছে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটারে (অনলাইন থেকে প্রাপ্ত তত্ব accurate নাও হতে পারে) প্রশ্ন জাগছে মনে কোথায় হারিয়ে গেল আমাদের দীর্ঘ নৌপথ, অগণিত ছোট-বড় নদী, খাল-বিল জলাশয়।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে প্রবল বর্ষার পর বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। প্রাণহানি হয়েছে বন্যা, ভূমিধস ও বজ্রপাতে। বাংলাদেশে বন্যার কারণ নানাবিধ, সিলেট সহ দেশে ভয়াবহ বন্যার অন্যতম কারন  simply আজ অবধি আমরা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পারি নাই। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছাড়া নগরায়ণ।

যে সব কারণে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্ট হয় তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে মানুষের দ্বারা সৃষ্ট কারণ অন্যতম। এর সমাধান কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। 

শহর অঞ্চলে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলে গাছপালা, নালা ও জলাধারের অস্তিত্ব প্রায় বিলোপ। এ ছাড়া পানি নিষ্কাশনের যে ব্যবস্থা তা অপ্রতুল। সিটি জেলা শহরে জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হলে এলাকাভিত্তিক সমাধান না খুঁজে পুরো নগরী এবং আশপাশের এলাকার জন্য পরিকল্পনা,যথাযথ নকশা প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন করা দরকার। এ জন্য পর্যাপ্ত ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ভূগর্ভস্থ নালা ও সুড়ঙ্গ স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিকেও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা জরুরি।

বাংলাদেশে হাওর অঞ্চলের লোকজন প্লাবনে অভ্যস্ত। তাদের জীবনযাপন এবং কৃষিব্যবস্থা অন্যান্য এলাকার জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। অতি বন্যা মোকাবিলায় দরকার বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে বর্তমান ও ভবিষ্যতে বন্যার প্রকৃতি ও ব্যাপকতা নিরূপণ করা। বন্যা তত্ব উপাত্ত্ব মডেলের সমন্বয়ে শুধু পূর্বাভাস নয়, চলমান সময়ে বন্যার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও নিরূপণ সম্ভব। এ জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক সেন্সর নেটওয়ার্ক স্থাপন করা দরকার । বন্যার সঙ্গে সম্পর্কিত সেন্সর তৈরির প্রযুক্তি সহজলভ্য এবং বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা স্বল্প খরচে এগুলো নির্মাণ ও স্থাপন করতে সক্ষম। এ ছাড়া উজানের দেশের সঙ্গে তথ্য–উপাত্ত বিনিময়ের মাধ্যমে পূর্বাভাসের মান বাড়ানো সম্ভব।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ ও নদ-নদী নিয়ে কাজ করছেন, এমন দুজন সম্মানিত শিক্ষকের সঙ্গে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় সংবাদ কর্মীরদের কথা হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে বন্যা থেকে রেহাই পেতে সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদী খনন করা জরুরি। এ ছাড়া সিলেট নগরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছড়াগুলো (প্রাকৃতিক) দখলমুক্ত করে খনন করে পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ নিশ্চিত করা দরকার। সিলেটে শহরের বন্যা নিয়ন্ত্রণে জ্ঞানী ঐ শিক্ষকদের মতামত দিক নির্দেশনা নোট্ করে এখান থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।

সুনামগঞ্জের পুত্রবধূ ফাতেমা আইয়ুব শশুর বাড়ির লোকজনের সাথে কোন ভাবেই যোগাযোগ না করতে না পেরে অনেকটা অসহায়ত্ববোধ করছেন। নিজের অসহায়ত্ব ও বাস্তবতা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, লিখেছেনঃ-

 "মানুষ হয়ে জন্মাবার অসহায়ত্ব টুক আজ বেশ টের পাচ্ছি। একজন মানুষ হয়ে অন্য একজন মানুষের জন্য যখন কিছুই করার থাকে না,  কিছুই করা যায় না ,তখন মানুষ হয়ে জন্মাবার মধ্যে যেন কোন সার্থকতা বা অহংকার নেই - এই বোধটা খুব বেশি পীড়া দেয়।  আপনজনরা যখন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে, খবরটা পেলাম কেবল ! এরপর আর কিছুই করা যাচ্ছে না! এমনকি ফোন করে জানতে পর্যন্ত পারছিনা '! কিভাবে আছেন ? কেমন আছেন? আদৌ কতটুকু সুস্থ আছেন? কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ করে সবার ঘরে ঘরে পানি,' পূর্বপ্রস্তুতির সময়টুকু পর্যন্ত পাননি !

পাঠক, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার এমপি মহোদয়ের বিশেষ প্রকল্প থেকে নদীমাতৃক দেশের বিচিত্র সুন্দর্য্য ধরে রাখার জন্য খাল-বিল নদী-নালা ঝোপ জঙ্গল পরিষ্কার ও পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা করার জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কর্তা অসাধু ব্যক্তিদের সাথে স্থানীয় অসাধুরা আঁতাত করে বাগবাটি করে এইসব খেয়ে ফেলে। বিশেষ এই বরাদ্দের টাকা গুলা আমরা যথাযত ভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। জলবায়ূ মন্ত্রণালয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নদীর নব্যতা নিয়ে ভাবতে হবে। ভাবতে হবে বরাদ্দের টাকা কিভাবে কাজে লাগানো যায়।

পাঠক, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে ওভারফ্লো করে শহর পানিতে তলিয়ে যাবে ইহা বন্যা আসলেই আমাদের উপলব্ধি হয়, খুবই হাস্যকর। বন্যা মোকাবেলার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিলেই বন্যা সমস্যার সমাধান হবে না। সিলেটসহ বাংলাদেশের নদী খাল-বিল পুকুর ডোবা সব পলিযুক্ত মাটিতে ভরে সমতল হয়ে গিয়েছে। যা আবারো পুনরাবৃত্তি করে লেখা শেষ করতে চাই, বন্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে টেকসই বন্যা ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দেওয়া একান্ত জরুরি।

লেখক: জার্নালিস্ট, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) লন্ডন। মেম্বার, দ্য ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম।

logo

প্রধান সম্পাদক : হেফাজুল করিম রকিব

সম্পাদক : নূরুন্নবী আলী