নিজস্ব সংবাদদাতা
২৫ জুন, ২০২৪, 3:16 PM
মেলায় একটি গাছের দামই ১৩ লাখ টাকা
বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে চলছে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) সংলগ্ন মাঠে চলতি মাসের ৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা।
ইতিমধ্যে অর্ধেক সময় পেরিয়েও গেছে বৃক্ষ মেলার। বিভিন্ন জাতের গাছে ভরে গেছে মেলার স্টলগুলো। এসব গাছ দেখতে ও কিনতে প্রতিদিনই ভিড় লেগে থাকে বৃক্ষপ্রেমীদেরও।
এমেলার সুবিধা হলো একই সময়ে একই ছাদের নিচে এক জায়গায় নানা রকম গাছ, গাছের চারা দেখা যায়, কেনা যায়। ফুল-ফল থেকে শুরু করে বনসাই, ঔষধি, অর্কিড, দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির বাহারি গাছে ভরা এই মেলা। এমনকি পাওয়া যায় বিরল কিছু গাছ ও।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে ‘লিভিং আর্ট বনসাই’ নামক এক স্টলে নানা জাতের বনসাই দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। যে গাছটিকে ঘিরে আকর্ষণ তা হলো একটি আমবটের এক বনসাই বা বামন বৃক্ষ। যার দাম চাওয়া হচ্ছে ১৩ লাখ টাকা।
এখন পর্যন্ত দামের দিক থেকে এটাই সর্বোচ্চ। এছাড়া লাখ টাকার বেশি দাম—এমন আরও গাছ রয়েছে।
বনসাই গাছ, উঁচু দামের বামন বৃক্ষদামের দিক থেকে অনেক উঁচু হলেও আকারের দিক থেকে বামন হয়ে থাকে বনসাই গাছগুলো। বামন বৃক্ষ বা বনসাই শুধু তো গাছ নয়, একেকটা শিল্পকর্ম। আর পেছনে থাকে বছরের পর বছর ধরে পরিচর্যা, অধ্যবসায়ের গল্প। তাই দামে বনসাই এগিয়ে।
নার্সারির মালিকরা বলছেন, ‘প্রজাতি, বয়স, আমদানি খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণের ওপর নির্ভর করে গাছের দাম। আবার প্রথম প্রজন্ম হিসেবে দেশে কোনো গাছ এলে সেটারও দাম বেড়ে যায়। নানা কিছু মিলেই কিছু গাছের দাম লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।’
এবারের মেলাতে পঞ্চাশোর্ধ্ব বছর বয়সের বনসাই আমবট এনেছে হোসেন নার্সারি। গাছটির কাণ্ড বটের মতো আর পাতা আমপাতার মতো। আমবটটির দাম চাওয়া হচ্ছে ১৩ লাখ টাকা।
বেশি দামের কারণ হিসেবে নার্সারি মালিক জানান, গাছটি প্রায় পঞ্চাশোর্ধ্ব বছর আগের এবং নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রম করা এ গাছের দাম একটু বেশি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
এছাড়া বনসাই গাছের শিল্পকর্ম তৈরি করতে অনেক সময় লাগে এবং সেগুলি তৈরি করতে প্রচুর পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়৷
অন্যান্য বনসাই গাছ
মেলায় অন্যান্য নার্সারিতেও অন্যান্য দামী বনসাই গাছ রয়েছে। বরিশাল নার্সারিতে চীনের জিনসেং গাছের লম্বাটে ‘মিলিয়নিয়ার’ বনসাই দেখা যায়, যার দাম হাঁকা হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। এটা পাঁচ বছর আগে চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে। একই গাছের একটু ছোট কয়েকটা বনসাই আকারভেদে দাম ৪, ৬ ও ৮ লাখ টাকা।
থাইল্যান্ডের প্যাগোডাট্রির বনসাই এনেছে লেকভিউ গার্ডেন সেন্টার। দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ৯ বছর ধরে বাংলাদেশেই চলেছে এর পরিচর্যা।
শুধু বিদেশি নয়, দেশি বনসাইও রয়েছে বৃক্ষ মেলায়। ১০ বছর বয়সী হিজলের বনসাই এর দাম ১ লাখ টাকা। তেঁতুলগাছের সুন্দর বনসাই দেখা যায় মেলার মুক্তাগাছার বনরূপা নার্সারিতে। ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী এই তেঁতুল বনসাইয়ের দাম ৭০ হাজার টাকা।
কারা কেনেন এত দামী বনসাইএ
ত দামী গাছ, আসলেই কি বিক্রি হয়? নার্সারির মালিক ও কর্মীরা জানান, মেলায় যে দাম যা চাওয়া হয়, শেষ পর্যন্ত সেই দামেই খুব একটা বিক্রি হয় না। ক্রেতার সাথে আলোচনা করে, মুলামুলি করে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমে যায় গাছের দাম।
কারা কেনেন এত দামি গাছ? জানা গেল, বৃক্ষপ্রেমী শিল্পপতি ও বড় ব্যবসায়ীরা এসব গাছ কেনেন। পাশাপাশি বেসরকারি পার্ক, রিসোর্ট কিংবা অভিজাত আবাসন প্রকল্পের জন্যও এমন গাছ কেনা হয়।
জাতীয় বৃক্ষমেলা বিনা মূল্যেই ঘুরে দেখা যায়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
মাঝখানে পবিত্র ঈদুল আযহা জন্য কিছুদিন দিন বন্ধ ছিল বৃক্ষমেলা। বিরতির পর আবার শুরু হয়েছে। বন বিভাগ আয়োজিত এই মেলা চলবে আগামী ১৩ জুলাই পর্যন্ত।