ঢাকা ১৬ অক্টোবর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
দক্ষিণ ভূর্ষি শীতলা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাঞ্চন নাথ, সম্পাদক সুমন দেবনাথ “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা: ছাত্রদল কমিটিতে ‘শিবির সংশ্লিষ্টতার' অভিযোগ পটিয়ায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সমন্বয় সভা পটিয়ায় ভূমি অফিসে দালালবিরোধী অভিযান, এক যুবকের সাজা ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৪২ পটিয়ায় একই দিনে অজ্ঞান পার্টির প্রতারণা ও দরজা কেটে ১৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে স্বর্ণালংকার- নগদ টাকা হারালেন বৃদ্ধা পটিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় দুই চুরি, এক আত্মহত্যা : চরম উৎকন্ঠায় স্থানীয়রা

মাঠে মিলছে কৃষকের বন্ধু সাদা বক

#

নিজস্ব সংবাদদাতা

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২,  4:00 PM

news image

কৃষক শরিফুল ইসলাম চাষ করতে কলের লাঙ্গল ঘুরাচ্ছেন নিজ জমিতে। এই লাঙ্গলের ফালার নিচে খাবার খুজে নিচ্ছে সাদা বকগুলো। কিমিরমিচির শব্দে গোটা ক্ষেত ঘিরে ফেলেছে দেশীয় প্রজাতির এই বকপাখি। কৃষক আর বকপাখি একাকার হয়ে গোটা ক্ষেত দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। 

এই দৃশ্য ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মাঠের। কৃষকরা জানিয়েছেন পাশ্ববতৃী কয়েকটি গ্রামের মাঠে এই সাদা বকপাখি গত কয়েক বছর এভাবে এসে ভীড় করে। তারাও এতে খুশি হন, বকগুলোকে আপন করে নিয়েছেন। তাদের উপস্থিতিতে বখপাখি পালায় না, তবে বাইরের কেউ আসলে ছুটে অন্যত্র চলে যায়।


কৃষক গোলাম রসুল জানান, বর্তমানে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষির বন্ধু পাখি। দ্রুত শহরায়নের ফলে পরিবেশবান্ধব এসব পাখিগুলো এখন তেমন একটা দেখা যায় না। কৃষিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও কারেন্ট জালের ব্যবহারের ফলে মারা পড়ছে কৃষিবান্ধব পাখিগুলো। জলবায়ু পরিবর্তন ও পাখিদের আবাসস্থল বড় বড় গাছ ও বনজঙ্গল নির্বিচারে ধ্বংসের ফলেও হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারন। এক সময় বিল ও জলাশয়ের ধারে দল বেধে নামতো দেশি সাদা বক। কৃষকের নাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ ও ফসল কাটার সময় পাখির দল ঘিরে ধরতো। পাখির দল ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে পেট ভরাতো। জীববৈচিত্রের আদরমাখা এই দেশি পাখি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। শুধু গ্রামগঞ্জে ফসলের জমিতে ও শহরের কিছু জ্বলাশয়ে শীতের মৌসুমে দেখা মেলে স্বল্পসংখ্যক পাখির।

কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভবানীপুর, ডেফলবাড়ি, বানিয়াকান্দরসহ পাশ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মাঠে চলতি মৌসুমে ইরি ধানের ক্ষেতে চাষ করার সময় প্রচুর বক দেখা মিলছে। তার শুক্রবার তিনি জমিতে চাষ করার সময় অসংখ্য পাখি দেখা মেলে। তারা লাঙ্গলের ফালায় মাটি খোড়ার পর যে পোকামাকড় বের হচ্ছে তা ধরে ধরে খাচ্চে। কলের লাঙ্গলের ঘরঘর শব্দ আর তাদের কথাবার্তার মধ্যেও পাখিগুলো ভয় পাচ্ছে না। তারা তাদের খাবার খেয়ে যাচ্ছে। অপুর্ব এদের এই কোলাহল দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারিরাও।


একই মাঠে কাজ করা কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, এই সাদা বক আমাদের অনেক উপকার করে। চারা ধানের জমিতে মাজরা পোকা ও ফড়িংসহ ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলছে। এছাড়া ক্ষেতে পানি দেওয়ার পর এসব পোকা ভাসতে থাকে আর তা খেয়ে সাবাড় করে। এতে ফসলের উপকার হয়। কিন্তু এখন সৌন্দর্যের প্রতীক এই সাদাবক আগের মতো আর দেখা যায় না। শিকারীদের ফাঁদে পড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে এই সাদা বক গত কয়েকটি বছর এই মাঠে আসছে। এই অবস্থাতেও অনেকে মাঠে বক মারতে আসেন। 

আরেক কৃষক সরোয়ার হোসেন জানান, ছোট বেলা থেকে মাঠেই কাজ করছেন। মাঠে অনেক ধরণের পাখি দেখেছি। প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গতো পাখির ডাকে। কিন্তু বর্তমানে সে সব পাখি আর দেখা যায় না। গাছ কাটায় পাখিদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। তাছাড়া জমির ফসলে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে ছোট মাছ ও পোকামাকড় মারা যাচ্ছে। ফলে বিষযুক্ত খাদ্য খেয়ে প্রাণ হারাচ্ছে এসব পাখি।


এ বিষয়ে জীববৈচিত্র ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি মাসুদ আহম্মেদ সনজু জানান, এই পাখিগুলো কৃষকের বন্ধু। যারা এগুলো শিকার করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, এই বকপাখি দেথতে গিয়ে অনেক ভালো লেগেছে। তাদের নিরাপত্তা দিতে পারলে আগামীতে আরো বেশি বেশি বক দেখা মিলবে বলে জানান।


জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ সুব্রত কুমার ব্যানার্জী বলেন,  বক আমাদের একটা প্রাকৃতিক বন্ধু। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন কীটনাশক ব্যবহার কমাতে হবে। যাতে বিষাক্ত মাছ ও পোকামাকড় খেয়ে বকপাখি না মারা যায়। 



logo

প্রধান সম্পাদক : হেফাজুল করিম রকিব

সম্পাদক : নূরুন্নবী আলী