NL24 News
২০ মার্চ, ২০২২, 10:05 PM
বস্তা ধরে নদীতে ভেসেছিলেন মোকছেদা
নিজস্ব প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া এমএল আশরাফ উদ্দিন লঞ্চের যাত্রী ছিলেন মোকছেদা বেগম।
নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোকছেদা বেগম। প্রতিদিনের মতো ডিউটি শেষে রোববার দুপুরে বাড়ি ফিরছিলেন।
পণ্যবাহী জাহাজটি তাদের লঞ্চটিকে ধাক্কা দেওয়ার পর কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কোনো উপায় না পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মোকছেদা। এরপর নদীতে ভাসমান একটি বস্তা ধরে ভেসেছিলেন। পরে একটি ট্রলার এসে তাকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে নিয়ে যায়।
এ সময় তিনি বলেন, বড় জাহাজটি আমাদের পেছনে ছিল। হঠাৎ আমরা দেখলাম, জাহাজটি লঞ্চের সঙ্গে লেগে গেছে। পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সামনের দিকে নিয়ে আসছে লঞ্চকে। ডুবে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা মনে করেছি, পেছন থেকে সরে যাবে জাহাজটি। কিন্তু পানি উঠে এরই মধ্যে লঞ্চটি ডুবে যাচ্ছিল। তখন জিনিসপত্র ফেলে নদীতে ঝাঁপ দিই। কিছুক্ষণ ভেসে থাকি একটা বস্তা ধরে। স্রোতের মধ্যে পানি খাচ্ছিলাম। এরপর ট্রলার এসে আমাকে উদ্ধার করে।
এদিকে নিখোঁজদের তালিকা পাওয়া না গেলেও এ পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের রমজানবেগ এলাকার আরিফা বেগম (৩৫) ও তার ছেলে সাফায়েত (২) নিখোঁজ আছে বলে মুন্সীগঞ্জ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সূত্রে জানা যায়।
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় চর সৈয়দপুর এলাকায় পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় এমএল আশরাফ উদ্দিন নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লঞ্চের যাত্রীরা। কেউ কেউ সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। তবে কতজন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডক্লিউটিএ।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন বলেন, উদ্ধারকারী বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা বিভাগ) বাবুলাল বৈদ্য জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনার পর মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। দুর্ঘটনার কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জ যাওয়ার পথে ১৫০ যাত্রীর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন লঞ্চটি জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায়। যখন লঞ্চটি ডুবে যাচ্ছিল, তখন যাত্রীরা প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন। লঞ্চটিতে ঠিক কতজন যাত্রী ছিলেন তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। ধারণা করা হচ্ছে, লঞ্চটিতে শতাধিক যাত্রী ছিলেন।
তবে নারায়গঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের দাবি- লঞ্চে ২০ থেকে ২৫ জন যাত্রী ছিল। বেশিরভাগই সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছেন।
নারায়ণগঞ্জ নৌ-পুলিশের এসপি মীনা মাহমুদা বলেন, পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে গেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। খবর পেয়ে সেখানে নৌ-পুলিশ পাঠিয়েছি। তবে লঞ্চের কতজন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ডুবে যাওয়া লঞ্চ এমএল আশরাফ উদ্দিনের মালিকের ছেলে আল ইসলাম বলেন, লঞ্চে কত যাত্রী ছিল তা নিশ্চিত হতে পারিনি আমরা। আমাদের লঞ্চটি ১৫০ যাত্রীর ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন।