NL24 News
১৯ জানুয়ারি, ২০২২, 9:58 PM
এক জলাশয়ের মাছ নিয়ে দুই উপজেলায় টানাটানি
এনএল রিপোর্ট
সিলেটে একটি জলাশয়ে ধরা নিয়ে উপজেলার দুই দুটি গ্রামের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে দুই উপজেলার মধ্যবর্তী এ জলাশয় থেকে সম্মিলিতভাবে মাছ ধরা হলেও এখন দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে দ্ব›দ্ব দেখা দিয়েছে। মইডুবি নামের এ জলাশয়টি সিলেটের ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নের মান্দারুকা গ্রামে অবস্থিত। জলাশয়ের অপর প্রান্তে বিশ্বনাথ উপজেলার কোনোরাই গ্রাম।
মান্দারুকা গ্রামবাসীর অভিযোগ, বিগত ৫ বছর ধরে জোরপূর্বকভাবে ওই জলাশয়টি অস্থায়ীভাবে বিক্রি করে মৎস্য শিকার করে নিচ্ছেন কোনোরাই গ্রামের প্রভাবশালীরা। বিরোধকৃত এ জলাশয়টির সীমানা নির্ধারনসহ জটিলতা অবসানে গত তিন বছর ধরে সিলেটের জেলা প্রশাসক ও ওসমানীনগরের ইউএনও বরাবরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
জানা গেছে, সম্প্রতি জলাশয় থেকে মাছ ধরা নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছে। এ নিয়ে গত রোববার ওসমানীনগরের মান্দারুকা গ্রামবাসীর পক্ষে সৈয়দ হাফিজ আলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন। গত মঙ্গলবার সেচের মাধ্যমে পানি শুকিয়ে জোরপূর্বক মাছ সংগ্রহের চেষ্ঠাসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মান্দারুকা গ্রামের সৈয়দ হাফিজ আলীর বাড়িতে হামলা করেন কোনোরাই গ্রামের প্রভাবশালীরা। খবর পেয়ে ওসমানীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) রাজিব দাশ পুরকায়স্থ ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মইডুবি জলাশয় থেকে কোনোরাই গ্রামবাসীর শ্যালো মেশিন জব্দ করে নিয়ে আসেন এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
মান্দারুকা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে ওই মইডুবি জলাশয়টি উন্মুক্ত হিসাবে ওসমানীনগরের মান্দারুকা ও বিশ^নাথে কোনোরাই গ্রামের বাসিন্দারা সম্মেলিতভাবে মৎস্য আহরণ করে আসছেন। বিগত ১০ বছর ধরে মান্দারুকা গ্রামবাসীকে বঞ্চিত করে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে অন্যদের কাছে বিক্রি করে যাচ্ছেন কোনোরাই গ্রামের প্রভাবাশালীরা। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে একাধিক সালিশ বৈঠক হয়। তবুও কোনোরাই গ্রামের প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক জলাশয় দখল করে মাছ আহরণ করে আসছেন। এ নিয়ে জলাশয়ের সীমানা নির্ধারনসহ জটিলতা নিরসনে লিখিত অভিযোগ দিলে ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসন কার্যকর কোনো নেয়নি। ফলে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছেই। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে।
বিশ^নাথের দেউকলস ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খায়রুল আমিন আজাদ বলেন, মান্দারুকা ও কোনারাই গ্রামবাসীর মধ্যে একে অন্যের প্রতি খুবই বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক রয়েছে। সীমানা নির্ধারনসহ মইডুবি জলাশয় নিয়ে বর্তমানে যেসব জটিলতা দেখা দিয়েছে আমরা তা নিরসনের চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম মাঈন উদ্দিন বলেন,অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। শান্তি শৃঙ্খলার বজায় রাখার জন্য স্থানীয়দের আহব্বানের পাশাপাশি অপ্রতিকর পরিস্থিতি এড়াতে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে ওসমানীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) রাজিব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, সরেজমিনে গিয়ে জলাশয়ের পানি শুকিয়ে মৎস্য শিকারের সত্যতা পাওয়ায় ব্যবহৃত শ্যালো মেশিন জব্দ করা হয়েছে।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা বলেন, ‘অভিযোগের তদন্তের পাশাপাশি মইডুবি জলমহালের সীমানা নির্ধারনের জেলা প্রশাসক স্যারের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে হাওর বা জলাশয়ের পানি শুকিয়ে মৎস্য শিকার সম্পন্ন বেআইনী। সীমানা নির্ধারনসহ অন্যকোনো জটিলতা থাকুক বা না থাকুক কোনো অবস্থায়ই জলাশয় শুকিয়ে মাছ শিকার চেষ্টা করা হলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ’