একটি শিয়াল হত্যাকাণ্ডে আমার সম্পৃক্ততা এবং ফরাসি বুলডগ এর প্রতি ভালোবাসা
২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, 11:09 PM

NL24 News
২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, 11:09 PM

একটি শিয়াল হত্যাকাণ্ডে আমার সম্পৃক্ততা এবং ফরাসি বুলডগ এর প্রতি ভালোবাসা
নজরুল ইসলাম ll ফরাসি বুলডগ হ'ল নির্ভুল সহচর কুকুর। শান্ত, মিশুক, মিষ্টি। এটি শিশুদের সাথে, অন্যান্য কুকুর এবং লোকদের সাথে খুব ভালভাবে মিশে যেতে পারে।
পাঠক, আজকে যে ফটো আপনাদের সাথে শেয়ার করছি সেটা দেখে আপনারা অনেকেই আমাকে খবিস (নোংরা; অপরিষ্কার) সম্বোধন করবেন! তা জেনেও লোভ সামাল দিতে পারেনি ফটোটি শেয়ার করার।
ফরাসি বুলডগ এর মালিকের সাথে কথা বলছিলাম। বুলডগের নাম জানতে চেয়েছিলাম। তার নাম জন, বুলডগ আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিল যে, যা দেখে আমি আবেগে আপ্লুত হয়েছি! নির্বাক একটি প্রাণী কিভাবে মানুষের প্রতি, মানুষের ভালবাসার প্রতি আসক্ত হয়। আমি লোভ সামাল দিতে পারিনি কুকুর টিকে স্পর্শ করার। বুলডগটিকে স্পর্শ করতেই সে আমার সাথে এমন (আহ্লাদী) শুরু করেছে which is বর্ণনাতীত! একটি ব্যাগের ভিতর রাখা ছোট বাচ্চাদের মতো পাম্পাস নেপি পরানো। বাচ্চাদের মতো টয়লেট করলেই নেপিতে পড়বে। প্রথম স্পর্শ করেছি, একটু কথা বলেছি। কি নির্বাক চাহনি তার আমার দিকে! এরপরে ব্যাগসহ আমার কোলে নিয়ে এসেছি। নির্বাক এই প্রাণীর প্রতি আমার ভালোবাসা এবং ভীতি মিলে একটা এক্সাইটিং ফিলিং কাজ করছিল।
ফরাসি বুলডগ এর মালিক বললেন, সে তাদের পরিবারের সদস্যের মতো। একটা ছোট্ট শিশুকে যেভাবে স্নেহ মমতা আদর ভালোবাসা দিয়ে সারাদিন রাখা হয় সে অনেকটা এমনই।
পাঠক, প্রকৃতি ও প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা আমি যে দেশে বসবাস করি যুক্তরাজ্য, এ দেশের মানুষদের যেন স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। ওরা কুকুর, বিড়াল, পাখিদের প্রতি যে পরিমাণ সংবেদনশীল আমরা শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষদের প্রতিও ততটা হয়ে উঠতে পারিনি। এ দেশে শীত-বর্ষায় রাস্তায় যাঁরা কুকুর নিয়ে বের হন তাঁরা নিজেদের পাশাপাশি সঙ্গী কুকুরকেও গরম পোশাকে জড়িয়ে নেন, বৃষ্টিতে ছাতার নিচে রাখেন। রাস্তার পাশে কোনো গৃহহীন ব্যক্তি প্রচণ্ড শীতে তাঁর নিজ জ্যাকেট বা শীত নিবারণ বস্তুটি সঙ্গী কুকুরের গায়ে পরিয়ে দেন বা তাকে জড়িয়ে রাখেন।
শুনেছি যুক্তরাজ্যে নাকি মানুষের চাইতে শিয়ালের সংখ্যা বেশি, হয়তো কথার কথা। এ দেশের শিয়ালরাও নির্বিঘ্ন, এরা রাতে গাড়ির হেড লাইটের আলোয় আতঙ্কিত হয় না; বরং শান্ত ভঙ্গিতে রাস্তা পার হয়ে ঝোপের আড়ালে যায়। অথচ আমরা বাংলাদেশে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ ও প্রচলন দেখে বড় হয়েছি।
#বানের পানিতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হারায়ে একটি শিয়াল উপায়ান্তর না দেখে প্রকাশ্যে চলে আসে। কোন কারন ছাড়া তাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই হত্যাকাণ্ডে আমিও ছিলাম। দেশে বন্যপ্রাণী ও পাখিদের প্রতি নির্মমতার শেষ নেই। ছোট বাচ্চারা সদ্যঃপ্রসূত বিড়ালের বাচ্চাকে তার মা থেকে পৃথক করবে, তার গলায় রশি বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে তার সঙ্গে মজা করবে, রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে ঘুমন্ত কুকুরকে লাথি দেবে বা গুলতি দিয়ে পাখি মারবে—এগুলোই আমাদের দেশে প্রাণীদের প্রতি সামগ্রিক আচরণ। আমাদের অভিভাবকেরাও সন্তানদের এরূপ আচরণে নির্বিকার।
শুধু ছোট বাচ্চারা নয়, অতিথি পাখি নিধন ও প্রকাশ্য বিক্রয়, বনভূমি দখল ও উজাড় করে কাঠ পাচার, সুন্দরবনের হরিণের মাংসের জমজমাট ব্যবসা, বাঘ হত্যা ও তার চামড়া বিক্রি এগুলোতে নিত্যদিনের ঘটনা।
পাঠক,আমাকে খবিশ সংবেদন করবেন জেনেও ফটোটি শেয়ার করার একটি মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রকৃতি লোভ বা ধ্বংস নয়; সৃষ্টি, সৃজনশীলতা ও বৈচিত্র্যের সঙ্গে সহাবস্থান শেখায়। প্রকৃতি, প্রাণী ও পাখিদের প্রতি ভালোবাসা মানুষকে উদার ও মননশীল করে। তাদের সঙ্গ মনে-প্রাণে ভিন্ন মাত্রার প্রশান্তি ও স্বস্তি এনে দেয়। তাই আমরা যেন প্রকৃতিকে ভালোবাসি, প্রকৃতিতেই বেঁচে থাকি ও প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেই।
পাঠক, বর্ণিত হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, অযথা কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া অনুচিত।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, এক যৌনকর্মী প্রচণ্ড গরমে হেঁটে যাচ্ছিল। পথে একটি কুকুরকে দেখতে পেল- পিপাসায় কাতর হয়ে কূপের কাছে চক্কর দিচ্ছে। পিপাসায় তার জিহ্বা বের হয়ে গেছে। তখন সে তার চামড়ার মোজা দিয়ে কূপ থেকে কুকুরের জন্য পানি তুলে আনল এবং কুকুরকে পান করালো। ফলে আল্লাহতায়ালা তাকে মাফ করে দিলেন। -সহিহ মুসলিম: ৫৬৬৫
অবৈধ যৌনকর্ম নিকৃষ্টতম পাপ। কিন্তু একটি অসহায় প্রাণীর প্রতি সে দয়াপ্রবণ হয়েছে, তাই আল্লাহতায়ালা তার ওপর দয়াপরবশ হয়ে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
পাঠক, পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা ভয়ংকর মানসিক বিকৃতির পরিচয়। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আর সেজন্যই সৃষ্টির অন্যান্য পশুপাখির প্রতি রয়েছে মানুষের দায়িত্ব।
নজরুল ইসলাম
জার্নালিস্ট, মেম্বার- ন্যাশনাল হকিস্টিক সোসাইটি, ইউনাইটেড কিংডম। ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেল্প সার্ভিস, ইউনাইটেড কিংডম।