৩ মাস শেষে এলো রায়_মুসলিম রীতিতে দাপন করা হবে পটিয়ার সেই যুবককে
নিজস্ব সংবাদদাতা
২৪ এপ্রিল, ২০২৩, 7:13 PM

নিজস্ব সংবাদদাতা
২৪ এপ্রিল, ২০২৩, 7:13 PM

৩ মাস শেষে এলো রায়_মুসলিম রীতিতে দাপন করা হবে পটিয়ার সেই যুবককে
মোরশেদ আলম, পটিয়া (চট্টগ্রাম):- চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া মনসা বাদামতল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া ২৯ বছর বয়সী যুবককে (রতন দাশ) ওরপে আহমাদকে মুসলিম রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার(২৩ এপ্রিল) দুপুর ১টায় উভয় পক্ষের আইনজীবীদের দীর্ঘ ২ ঘন্টার শুনানি শেষে পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বিশ্বেস্বর সিংহ নিহত যুবককের লাশটি দাফনের নির্দেশ দেন। তার ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা ক্বারি মোহাম্মদ আকরাম হোসাইনের জিন্মায় লাশটি দাফনের নির্দেশ দেন আদালত।
তবে এ রায়ের বিপক্ষে অষোন্তষ প্রকাশ করে যুবকের মা সন্ধ্যারানী উচ্চ আদালতে যেতে চান বলে জানান।
জানা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে পটিয়া উপজেলার মনসা বাদামতল এলাকায় তেলবাহী লরির চাপায় পিষ্ট হয়ে মোটরসাইকেল আরোহী ওই যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত যুবক তার মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় মুসলিম হওয়ার পরও তার মাকে নিয়ে নগরীর একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। আগ্রাবাদ এলাকায় একটি মোবাইল এক্সোসরিস প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করতেন। আর তার মৃত্যুর পরেই এখানে বাধে বিপত্তি। তার মৃত্যু হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে পরিবার ও তার সহপাঠীদের মধ্যে বিপত্তি ঘটলে উভয়পক্ষ আর হাইওয়ে পুলিশ আদালতের দ্বারস্থ হন।
গত ৩০ জানুয়ারি পটিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মার্চের ১৩ তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক বিশ্বেশ্বর সিংহ। কিন্তু ১৩ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি হাইওয়ে থানা পুলিশ। সেদিন তারা আবারো অধিকতর তদন্তের জন্য সময়ের আবেদন করে আদালতে একটি চিঠি দিয়েছেন। পটিয়া হাইওয়ে পুলিশের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত গত ২০ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির এ নির্দেশ দেন। কিন্তু ২০ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে এই দিন ছুটি থাকার কারণে সেদিন আদালত বন্ধ থাকায় সোমবার (২৪ এপ্রিল) উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বিশ্বেস্বর সিংহ এ আদেশ দেন।
নিহত যুবকের মা সন্ধ্যারানী দাশ শুরু থেকেই দাবি করে আসছিলেন রতন দাশ হিন্দু ছিলেন। তাই হিন্দু ধর্মের নিয়ম মেনে শেষকৃত্য চিতায় সম্পন্ন করতে চান। কিন্তু তার সহপাঠীদের দাবি, তিনি ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকার একটি মাদরাসায় মাওলানা হারুন এজাহারের কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এরপর থেকে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন ও ইসলাম ধর্মের সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতেন। তাই তারা মুসলিম হিসেবে তার লাশ দাফন করতে আগ্রহী। এজন্য তারা সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে হাইওয়ে থানার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন।
হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, নিহত ওই যুবকের নাম রতন দাশ (২৯)। বাড়ি মিরসরাই উপজেলার পূর্ব মায়ানী গ্রামে। তার বাবার নাম মনোরঞ্জন দাশ ও মায়ের নাম সন্ধ্যা রানী দাশ। নিহত যুবক দুই বছর আগে মুসলিম হিসেবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নাম পরিবর্তন করে আহমাদ নাম হয়েছেন। যার নোটারী নম্বর-১১০৫৪৪। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার বেশ কিছু ছবিও রয়েছে।
হাইওয়ে থানার ওসি স্নেহাংশু বিকাশ সরকার জানান, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির তদন্ত শেষে আমরা গত ২৮ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আদালত প্রতিবেদন বিবেচনা করে চূড়ান্ত রায় দিয়েছে।
অপরদিকে, সড়ক আইনে নিহত যুবকের মা সন্ধ্যা রানী দাশের দায়ের করা মামলাটি প্রধান আসামি ঘাতক ট্রাকচালক শাহাদাত হোসেন সিকদার প্রকাশ বাবুল ড্রাইভার (৪২) গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সে সাতকানিয়া উপজেলার পুরান নগর এলাকার আবুল হোসেন সিকদারের ছেলে। এখনো সে কারাগারে আছে এবং তেলবাহী গাড়িটি ও আটক আছে পটিয়া হাইওয়ে থানা পুলিশের কাছে।
যুবকটির ধর্মীয় শিক্ষক ক্বারী আকরাম হোসাইন জানান, আমার ছাত্র আহমাদের লাশটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘর থেকে বুঝে নেব। পটিয়া আদালতের সকল ডকুমেন্ট আমাদের সঙ্গে আছে। চট্টগ্রামের চৈতান্যগলি (২২ মহল্লা) কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।