স্বামীকে হত্যায় ৫০ হাজার টাকায় খুনি ভাড়া করেন স্ত্রী, কাজ শেষে দেন ৫০০
২৩ মার্চ, ২০২৩, 11:35 PM

NL24 News
২৩ মার্চ, ২০২৩, 11:35 PM

স্বামীকে হত্যায় ৫০ হাজার টাকায় খুনি ভাড়া করেন স্ত্রী, কাজ শেষে দেন ৫০০
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
দাম্পত্য কলহ ও সম্পত্তির লোভে স্বামী মো. এমদাদুল হককে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী নারগিস মোস্তারী। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেমাইয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে অচেতন করেন। পরে ভাড়া করা খুনি আইয়ুব আলীর সহায়তায় স্বামীর হাতে তার পেঁচিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
নারগিস মোস্তারী ও আইয়ুব আলীকে গ্রেফতারের পর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে এসব তথ্য। বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালতে জবানবন্দি দেন তারা।
নারগিস মীরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরের বাজার এলাকার আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে। আইয়ুব আলী নোয়াখালীর চরজব্বর থানার চরভাটা এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে ভোরের বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি।
জবানবন্দিতে নারগিস জানান, এক বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে ফেরেন স্বামী এমদাদুল হক। তাদের সংসারে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বামীর সঙ্গে প্রায় ঝগড়া হতো নারগিসের। দাম্পত্য কলহ ও সম্পত্তির লোভে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নারগিস। হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করতে ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে আইয়ুব আলীকে ভাড়া করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেলে সেমাইয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে অচেতন করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আইয়ুব আলীর সহায়তায় স্বামীর হাতে জিআই তার পেঁচিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
হত্যাকাণ্ড শেষে রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরে যান আইয়ুব আলী। পরে ২টার দিকে দেবর কামাল পাশাকে ফোন করে নারগিস জানান- বৈদ্যুতিক শক খেয়েছেন তার ভাই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মীরসরাই থানার এসআই মো. মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি- ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে এমদাদুল হকের লাশ। বাঁ হাতে পোড়ার চিহ্ন ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। পিঠেও কালচে দাগ ছিল। স্ত্রীর কথা সন্দেহজনক হওয়ায় অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। হত্যাকাণ্ডে আইয়ুব আলী নামে আরো একজন জড়িত থাকার কথা জানান। এরপর বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরবাজার এলাকা থেকে আইয়ুব আলীকে গ্রেফতার করা হয়। আইয়ুব আলী পেশায় দিনমজুর। হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করলে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন নারগিস।
এসআই মো. মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া আরো বলেন, চুক্তি অনুযায়ী এমদাদুল হককে হত্যার পর আইয়ুব আলীকে ৫০০ টাকা দেন নারগিস। স্বামীর মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি বিক্রি করে বাকি টাকা পরিশোধের কথা ছিল। মূলত বাবার বাড়িতে ঘরের কাজ করানোর সময় আইয়ুব আলীর সঙ্গে পরিচয় হয় নারগিসের। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিআই তার, মাল্টিপ্ল্যাগ, প্লাস ও আইয়ুব আলীর কাছে থাকা ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তারা।
এর আগে, বুধবার সকালে উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে এমদাদুল হকের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে এ ঘটনায় রাতেই দুজনকে আসামি করে মীরসরাই থানায় মামলা করেন নিহতের ছোট ভাই কামাল পাশা।