সিরাপ খাইয়ে শাহজাহান হত্যা: মামলার জট খুলল পিবিআই
নিজস্ব সংবাদদাতা
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, 8:40 PM

নিজস্ব সংবাদদাতা
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, 8:40 PM

সিরাপ খাইয়ে শাহজাহান হত্যা: মামলার জট খুলল পিবিআই
মোরশেদ আলমঃ- ২০২০ সালের ২ অক্টোবর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা থেকে নিখোঁজ হন মো. শাহজাহান আলম বালু (৩৮)। তিনি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের খিতাপচর গ্রামের নূর হোসেন মেম্বারের ছেলে। ৫ অক্টোবর বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের খিতাপচরে রায়খালী খালে পাওয়া যায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ। এ ঘটনায় পরদিন পুলিশ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এদিকে শাহজাহান নিখোঁজের ঘটনায় পটিয়া থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন তার ভাই জাহাঙ্গীর আলম। এ মামলায় পুলিশ তিন আসামিকে গ্রেফতার করে। তবে তাদের গ্রেফতারের পরও রহস্যের কোনো কিনারা হচ্ছিল না। একই ভাবে জট খুলছিল না বোয়ালখালী থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলারও। শেষমেশ মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কয়েক মাস পর সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট নিশ্চিত হয় খালে মৃত যুবক পটিয়া থেকে নিখোঁজ হওয়া সেই শাহজাহান। যাকে পেটের ভেতর থেকে ইয়াবা বের করতে ওষুধ খাইয়ে মারে ঘাতকরা।
সোমবার দুপুরে এ তথ্য জানান পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের সুপার নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ২ অক্টোবর রাতে শাহজাহান পটিয়ার আমির ভান্ডার দরবার শরিফ জিয়ারতের জন্য বাড়ি থেকে বের হন। জিয়ারত শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাকে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পটিয়া থানায় অপহরণ মামলা হয়।
এ ঘটনায় ১৭ ফেব্রুয়ারি পটিয়া উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয় দুই যুবককে। তারা হলো- মো. সাইফুল ইসলাম (৪০) ও মেহেদী হাসান ওরফে হিরু (২৭)। তারা দুজনই পটিয়ার দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে সাইফুলের বাবার নাম মৃত নুরুল আলম এবং মেহেদীর বাবার নাম আবু ছিদ্দিক। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই সময়ে শাহজাহানের স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। একপর্যায়ে অপহরণের দিন রাতে শাহজাহানের এক স্বজনের মোবাইলে একটি কল আসার তথ্য মেলে। সেই কলের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শুরু হয় তদন্ত।
গ্রেফতারের পর দুই যুবককে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে দুজনেই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এরপর রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুই আসামিকে নিয়ে মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং আলামত জব্দের জন্য পটিয়া এলাকায় যায় পিবিআইয়ের একটি টিম। তাদের নিয়ে উপজেলার দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নের খানমোহনা গ্রামের মহিষপাড়া এলাকার হত্যাকান্ডের স্থান পরিদর্শন করা হয়।
এ সময় আসামিদের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পটিয়ার খানমোহনা পশ্চিম বিলে নুরুর মহিষ রাখার পরিত্যক্ত ঘরের পাশ থেকে ভুক্তভোগীকে মারধরে ব্যবহৃত তিনটি গাছের লাঠি ও একটি পিভিসি পুরনো পাইপ জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে বেশ কিছু সিরাপ ও ট্যাবলেট জব্দ করা হয়, যেগুলো ভুক্তভোগীকে খাওয়ানো হয়েছিল।
আসামিরা স্বীকারোক্তিতে জানায়, ২০২০ সালের ২ অক্টোবর রাত সাড়ে ৩টার দিকে মহিউদ্দিন ও সুজন নামে দুজন বিয়ের ভিডিও প্রোগ্রাম শেষ করে খানমোহনা এলাকায় দোকানে যাচ্ছিল। একই সময়ে রেলস্টেশনের পাশে আমির ভান্ডার দরবার থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন শাহজাহান। এ সময় শাহজাহানের সঙ্গে মহিউদ্দিন ও সুজনের সাক্ষাৎ হয়। শাহজাহানকে ইয়াবা ব্যবসায়ী সন্দেহ করে দুজনে গতিরোধ করে। এরপর দুজনে মিলে শাহজাহানকে খানমোহনা পশ্চিম বিলে নুরুর মহিষ রাখার পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায়।
এরপর ফার্মেসি থেকে সিরাপ এনে খাওয়ানো হয়। এরপর শাহজাহানের অবস্থা খারাপ দেখে ঘাতকরা তাকে খালে ফেলে চলে আসে। তার দেহ ভাসতে ভাসতে বোয়ালখালী চলে যায়।
ঘটনার তিন দিন পর ওই বছরের ৫ অক্টোবর বোয়ালখালীর সারোয়াতলী ইউনিয়নের খিতাপচরে রায়খালী খালে মাঝির ব্রিজের নিচে শাহজাহানের মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা থানায় ফোন দেয়। পরে পুলিশ এসে মরদেহটি নিয়ে যায়।