ঢাকা ২১ অক্টোবর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা: আবির্ভাব হলো টেস্ট টোয়েন্টি দক্ষিণ ভূর্ষি শীতলা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাঞ্চন নাথ, সম্পাদক সুমন দেবনাথ “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা: ছাত্রদল কমিটিতে ‘শিবির সংশ্লিষ্টতার' অভিযোগ পটিয়ায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সমন্বয় সভা পটিয়ায় ভূমি অফিসে দালালবিরোধী অভিযান, এক যুবকের সাজা ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৪২ পটিয়ায় একই দিনে অজ্ঞান পার্টির প্রতারণা ও দরজা কেটে ১৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে স্বর্ণালংকার- নগদ টাকা হারালেন বৃদ্ধা

লাখো পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত

#

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩,  9:41 PM

news image

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন

আজ ২১ ফেব্রুয়ারী সরকারী   ছুটির দিন। দেশের  পর্যটন রাজাধানী   কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে।সকাল  থেকে সৈকতের ৫ কিলোমিটার বালিয়াড়িতে কোথায়ও তিল ধারণের ঠাই নেই। গত পাঁচ দিনে কক্সবাজারে ১০ লক্ষাধিক পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে।এ খাতে ব্যবসায়ীরা এ কয়দিনে হাজার কোটি টাকার ও বেশী আয় করেছে। কক্সবাজারের দুই শত ৩৫ টি শুটকি দোকানে বেচাকেনা হয়েছে শত কোটি টাকার শুটকি ।শুটকি ব্যবসায়ী নেতা ইব্রাহিম হোসেন বলেন,মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে আমরা ভালোই শুটকি বিক্রি করতে পেরেছি। এখানকার স্থানীয় শুটকী ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে শুটকী এনে আমরা পর্যটকদের চাহিদা পূরণ করছি।

 হোটেল-মোটেলগুলোতেও ঠাঁই মিলছে না। শুক্রবার,  শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার ছিল পবিত্র শবে ই মেরাজ,  সোমবার খোলার দিন থাকলে ও পর্যটকে ভরপুর ছিল  ও আজ মঙ্গলবার  মহান ভাষা শহিদ দিবস নিয়ে  টানা চার দিনের ছুটির সুযোগে  ১০ লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজার সৈকতে এসে ভিড় জমিয়েছেন।  স্থানীয়দের ধারণা কমপক্ষে তিন লক্ষাধিক পর্যটক আজ  এসেছে কক্সবাজার ।   আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত  পর্যটকে উপস্থিতি থাকবে চোখে পড়ার মত। ব্যবসায়ীরা বলছেন দিন ভালোই যাচ্ছে। 

এদিকে পর্যটক সমাগমের কারণে শহরসহ সৈকতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জান   জানান- ‘ট্যুরিস্ট পুলিশের  ১৮০ জন সদস্য প্রতিদিন সকাল থেকে সৈকতে ডিউটি করছেন। এই ১৮০ জন ১৭ ভাগে ভাগ হয়েই নেমেছেন হোটেল-মোটেল জোন থেকে সৈকত পর্যন্ত। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, আমাদের ডিউটিরত সদস্যরাও পর্যন্ত ভিড়ের কারণে এক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না।’

ট্যুরিস্ট পুলিশের এক পরিদর্শক জানান, সৈকতে তিল ধারণের জায়গাও নেই। এত বিপুলসংখ্যক ভ্রমণকারী গত পাঁচ বছরের সময়েও এক সঙ্গে ভিড় জমাননি।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি   আবুল কাশেম সিকদার  বলেন-‘গত শুক্রবার এক দিনেই কমপক্ষে তিন লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে কক্সবাজারে।আর আজ আরো বেশী পর্যটকের ভীড় লক্ষ্য করছি। কক্সবাজারের সাড়ে পাঁচ  শতাধিক হোটেলে ১ লক্ষ ৭০ হাজার   অতিথি থাকতে পারেন। বাদবাকিদের একটু কষ্ট করে রাত অতিবাহিত করতে হবে।’

তবে তিনি মৌসুমগত কারণে পর্যটকদের তেমন দুর্ভোগে পড়তে হবে না জানালেও বাস্তবে দেখা গেছে, অনেক ভ্রমণকারী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন রাত কাটানোর একটি কক্ষের জন্য। সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেলে সিট না পেয়ে শহরের ঘিঞ্জি এলাকার নিম্নমানের আবাসিক হোটেলের রুম পর্যন্ত বাড়তি ভাড়ায় পর্যটকরা ভাড়া নিয়ে রাত পোহাতে আশ্রয় নিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ অর্থাৎ বিজয় দিবসের সময়   এরকম কয়েক লাখ লোক সমবেত হয়েছিল  কক্সবাজারে। এবারও অনুরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যেসব ভ্রমণকারী আগে ভাগেই হোটেলের রুম বুকিং করে এসেছেন তারা কোনো রকমে ভালো রয়েছেন। কিন্তু যারা আগাম রুম ভাড়া নিয়ে আসেননি তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। শহরের হোটেল-মোটেল ও কটেজ জোনে কোনো রুম খালি নেই। এমনকি হোটেলের পরিত্যক্ত রুম পর্যন্ত ভাড়া হয়ে গেছে

কটেজ জোনের নকশিকাঁথা নামের একটি কটেজের রিসিপশন রুম পর্যন্ত ভাড়া হয়ে গেছে। সেখানে পাতানো হয়েছে গণবিছানা। একটি রুমে ১৫ জন রাত কাটাতে ভাড়া নিয়েছেন ৯ হাজার টাকায়। অনুরূপ ওই এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসার দোকানগুলোতে চৌকি বসিয়েও ভাড়া দেওয়া হয়েছে। লাইট হাউজ, সৈকত আবাসিক এলাকা ও কলাতলিসহ আশেপাশের এলাকার বাসা বাড়ির কক্ষও ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অনেকেই থাকার জায়গা না পেয়ে রাস্তায় নতুবা গাড়িতে রাত কাটানোরও পরিকল্পনা করছেন।

তবে ভাগ্য ভালো বর্তমানের মৌসুমটি এমন যে, অতি শীত যেমনি নেই তেমনি গরমও নেই। অনেকেই দুই দিন থাকার পরিকল্পনা করে এসেও রাতেই কক্সবাজারের সাগর পর্যটন ছেড়ে নিজ বাড়ি ছুটছেন নতুবা যাচ্ছেন বান্দরবানের পাহাড়ি পর্যটন এলাকা উপভোগ করার জন্য। তবেশুক্র,  শনিবার নতুন করে আরো পর্যটকের ভিড় হবে সৈকতে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বাস বিমান ও প্রাইভেট গাড়িতে পর্যটকের দল কক্সবাজারে আসতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছেড়ে আসা কয়েক শ নৈশকোচ সোমবার সকালে এসে পৌঁছে কক্সবাজারে। এ কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অসহনীয় জ্যাম লেগে যায়। এক সঙ্গে প্রচুরসংখ্যক যানবাহন আসায় কক্সবাজার শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরে থামিয়েই যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হচ্ছে। এতে করে পর্যটকদের দুর্ভোগেরও শেষ নেই।

শুক্রবার সকাল থেকে দলে দলে পর্যটকরা নামেন কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে। দুপুর হতে না হতেই সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলি পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকা ভরে যায় মানুষে মানুষে। এ ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী পাথুরে সৈকত থেকে শফির বিল, পাটুয়ারটেক, মনখালী এবং টেকনাফ সৈকত পর্যন্ত প্রচুর সংখ্যক ভ্রমণকারির মিলন মেলায় পরিণত হয়।

ফরিদপুরের শামশুল হক দম্পতি জীবনের প্রথম বার এসেছেন কক্সবাজারে। তিনি জানান- ‘এই প্রথমবার এসে কক্সবাজারকে দেখলাম। এক সঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ আর দেখিনি। সৈকতে এত বেশি মানুষ দেখে মনে হচ্ছে এটা ঢেউয়ের সমুদ্র নয় যেন মানুষের সমুদ্র।’

নারায়ণগঞ্জের রিজভী আহমদ ন্যান্সী বলেন-‘  সাগর পাড়ে এসে মনে হচ্ছে, এখন আমরা মুক্ত পাখির মতো উড়ছি আর ঘুরছি।’

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন কক্সবাজারে দেশে করোনার সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ায় মানুষের মধ্যে করোনা ভীতি কেটেছে। সেই সঙ্গে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষ  ভ্যাকসিন আসার পর সাহস বেড়েছে করোনা ভীতিতে কাতর লোকজনের মধ্যে। এসব কারণে মৌসুমের শেষ দিকের চার পাঁচ দিনের ছুটিতে এভাবে লোকজন বেড়াতে ছুটে চলা।

 স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে কক্সবাজারে। কক্সবাজারে আসা-যাওয়ার যানবাহন ও বিমানেও গত সপ্তাহ থেকে শুরু করে আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো টিকেটই মিলছে না।

এদিকে কক্সবাজার সৈকত ছেড়ে ভ্রমণকারীরা পর্যটক জাহাজে চড়ে ছুটছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে।  টেকনাফ থেকে আরো ৭টি চট্টগ্রাম থেকে ১ টি  পর্যটক জাহাজসহ সবগুলো জাহাজ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা এবং স্পিড বোটে করে এক দিনে কমপক্ষে ৭/৮ হাজার পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করছেন প্রতিদিন।

এছাড়াও কক্সবাজারের ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভেতরে বাইরে ভীড় করছেন অসংখ্য পর্যটক। এর বাইরে ও নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র বিশেষ করে, ঈদগড়ের নিলাদ্রী,,চকরিয়ার সুরাজপুর মানিকপুর নিভৃতে নিসর্গ   নতুন পর্যটন কেন্দ্র, ছোট মহেশখালীর শেখ রাসেল শিশু পার্ক, আদিনাথ মন্দির সেখানে চলছে শিবচতুর্দশী পূজা ও মেলা। প্রতিদিন সেখানে দেশ বিদেশের লক্ষাধিক পৃণার্থী  প্রতিদিন জড়ো হচ্ছে।মেলা চলবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।শুধু তাই নয়, সোনাদিয়াতে ও যাচ্ছে প্রতিদিন ১০/১২ হাজার পর্যটক।ট্যুর অপারেটর নেতা বে ক্রুশিয়ার জাহাজের মালিক সোহেল আহমদ বাহদুর জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কাঠের তৈরি একটি বড় যাত্রীবাহী ট্রলার শুধুমাত্র পর্যটকদের বহনের জন্য মানানো হচ্ছে। এই ট্রলারে করে মাত্র ৪০ মিনিটে যাওয়া যাবে সোনাদিয়ায়। সারা বছর চলবে এটি।শুধুমাত্র দূর্যোগের সময় ব্যতিত।ফলে পর্যটক সেবায় এটি হবে নতুন সংযোজন। এই ট্রলারে করে এক সাথে তিন থেকে সাড়ে তিন 'শ' যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।

logo

প্রধান সম্পাদক : হেফাজুল করিম রকিব

সম্পাদক : নূরুন্নবী আলী