নিজস্ব সংবাদদাতা
২৭ অক্টোবর, ২০২৪, 12:38 PM
রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে যা করার সাংবিধানিক নিয়মেই করতে হবে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্রপতির ইস্যুতে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। যা করার তা সাংবিধানিক নিয়মেই করতে হবে। রোববার সকালে যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্রপতি অপসারণের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তাব স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি।
মির্জ ফখরুল বলেন, সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক শক্তির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না, সে প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের দেওয়া এক বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সম্প্রতি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নেন কয়েকটি সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ হয় ওইদিন। এ অবস্থায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। তাঁরা ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান।
বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। এতে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন আহত হন। পরে এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করবেন বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কাছ থেকে ঘোষণা আসার পরই বঙ্গভবনের সামনে থেকে সরতে শুরু করেন বিক্ষুব্ধরা। এরমধ্যে নানা পক্ষ থেকে বক্তব্য আসে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ইস্যুর আলোচনা শুরু হয় সম্প্রতি মানবজমিনের প্রকাশনা জনতার চোখের এক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশের পর। এতে দৈনিকটির প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রপতি তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তাঁর কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন, যা শপথ ভঙ্গের শামিল। অবশ্য সমালোচনা ওঠার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়।
রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে সোমবার বঙ্গভবনের পাঠানো এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নং-০১/২০২৪ এ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ৮ আগস্টের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকার নেওয়া মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অসত্য কথা বলেননি।
সোমবার রাতে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘আসল ঘটনাটা কি সেটা জানার চেষ্টা করেছি আমি, অনেকদিন। তারপর প্রেসিডেন্ট (রাষ্ট্রপতি) সাহেবের সাথে কথা বলেছি। প্রেসিডেন্ট সাহেব যা সত্য তাই বলেছেন। এখানে ষড়যন্ত্রেরও কিছু নেই আর প্রেসিডেন্ট অসত্য কথা বলেছেন বলেও তো আমার মনে হয় না। তিনি তো পরিষ্কার বলেছেন, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। ওই রিপোর্টেও কিন্তু তিনি নিজেই বলেছেন যে, এটা মীমাংসা হয়ে গেছে। সেটাও ছাপা হয়েছে।’