যে মসজিদে রক্ষিত আছে মহানবী (সা.) এর পদচিহ্ন
০৬ এপ্রিল, ২০২৩, 2:29 AM

NL24 News
০৬ এপ্রিল, ২০২৩, 2:29 AM

যে মসজিদে রক্ষিত আছে মহানবী (সা.) এর পদচিহ্ন
চট্টগ্রাম অফিস
বারআউলিয়ার পুণ্যভূমিখ্যাত চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে শহরের সবচেয়ে প্রাচীন ‘কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ’-এর নাম। আদিকাল থেকেই ধর্মীয় তীর্থস্থান হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এ মসজিদের। অতীত ঐতিহ্যকে ধারণ করে আজও টিকে আছে কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।
এ মসজিদের নিকটবর্তী লোকালয় কদম মুবারক নামে পরিচিত। এটির গঠন, অবকাঠামো, নির্মাণ শৈলী, কারুকার্য এখনো আকৃষ্ট করে মুসল্লিদের।
বৃটিশ শাসনামলে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদকে অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তখন এখানকার মুসলমানরা কদম মোবারক মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। নির্মাণের পর থেকে পাঁচ কাতারে ১০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতেন এ মসজিদে। বর্তমানে মসজিদটি সম্প্রসারণ করায় একসঙ্গে এক হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
কদম মোবারক মসজিদ-এর ইতিহাস মুঘল ফৌজদার ইয়াসিন খাঁন কর্তৃক এ মসজিদ নির্মিত হয়। মোঘল শাসকরা মগ এবং পর্তুগিজদের হাত থেকে চট্টগ্রামকে মুক্ত করে মোঘল শাসন প্রতিষ্ঠার পর তাদের বিজয়ের নির্দশন স্বরূপ বহু মসজিদ নির্মাণ করেন। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।
মসজিদের মূল কক্ষে রক্ষিত এক শিলাখন্ডে হযরত মুহম্মদ (সা.) এর একজোড়া পবিত্র পদচিহ্ন থেকে এ মসজিদের নামকরণ।
এ উৎকীর্ণ শিলালিপি থেকে জানা যায়, মুহম্মদ ইয়াসিন নামে এক স্থানীয় ফৌজদার মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহ এর শাসনামলে ১১৫৬ হিজরিতে (১৭২৩ খ্রি.) মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি নিজস্ব খরচে চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র চেরাগীর পাহাড় (মোমিন রোড) এলাকায় মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৭১৯ থেকে ১৭২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ চার বছরে মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।
কদম মোবারক মসজিদটি নির্মাণকালে মুঘল স্থাপত্য শৈল্পিক চেতনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটির নির্মাণ শৈলী এখনো আকৃষ্ট করে দর্শনার্থীদের।
কদম মোবারক মসজিদে মুঘল শাসকদের রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সমতল ভূমি থেকে অনুচ্ছ পাহাড়ের মাঝখানে উত্তর-দক্ষিণে লম্বাকৃতির এ মসজিদের ছাদ তিনটি গম্বুজ ও দুটি ভল্ট দ্বারা আচ্ছাদিত। চারকোণে রয়েছে তিন-স্তর বিশিষ্ট অষ্টভুজী মিনার বা বুরুজ।
মিনারগুলোর প্রতিটির শীর্ষে রয়েছে ক্ষুদ্র গম্বুজ এবং তারও শীর্ষে গোলাকার শীর্ষালঙ্করণ (finial)। এছাড়া মসজিদের সামনের দেয়ালের মাঝখানের দরজার দুইপাশে রয়েছে দুইটি সরু মিনার।
আয়তাকার এ মসজিদের মূল কক্ষের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে একটি করে পার্শ্বকক্ষ। মূল কক্ষটি তিনটি ‘বে’তে বিভক্ত এরং পশ্চিম দেয়ালের কেন্দ্রে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় মিহরাব। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে রয়েছে তিনটি খিলান দেওয়া দরজা। মাঝখানের দরজাটির আকার অন্য দুইটি দরজার তুলনায় বড়।
দরজাগুলোর সোজা ভেতরে পশ্চিমে দেওয়ালে রয়েছে তিনটি মেহরাব। মেহরাবগুলোর সংলগ্ন স্থানটুকু অপূর্ব সুন্দর, কারুকার্যময় লতাগুলোর নকশা ও সুন্দর হস্তাক্ষরে আরবি ভাষায় উত্তীর্ণ লিপি এখনো রয়েছে। মসজিদ গৃহের বাইরের দিকের মাপ হচ্ছে ১৩ মি × ৭.৪২ মি। এর সঙ্গে বাড়তি পার্শ্বকক্ষ দুইটির দৈর্ঘ্য ২৩ দশমিক ১৬ মিটার। মসজিদের পূর্ব দিকে রয়েছে এক সুপরিসর খোলা আঙিনা।
জনশ্রুতি কদম মোবারক মসজিদের উত্তর পার্শ্বের একটি কক্ষে পাথরের ওপর মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর পায়ের ছাপবিশিষ্ট কদম রয়েছে। তার পাশে রয়েছে আরেকটি পায়ের ছাপ, যা বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রা.) এর বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
কদমের ছাপদ্বয় মুঘল আমল থেকেই এখানে এভাবে সংরক্ষিত আছে। এক পদচিহ্ন বরাবরে বাংলায় লেখা রয়েছে- সরওয়ারে কায়েনাত হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম–এর কদম মোবারক।
অপর পদচিহ্ন বরাবরে লেখা রয়েছে- হজরত গাউসুল আজম আব্দুল কাদের জিলানী (রা.) এর কদম মোবারক।
মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা নবাব ইয়াছিন খান কদমের ছাপদ্বয় সুদূর আরব দেশ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন বলে জানা যায়। বিভিন্ন সময়ের সংস্কার ও সম্প্রসারণ কর্মকাণ্ডের ফলে মসজিদে কিছুটা আধুনিকতার ছাপ পড়লেও মসজিদটির মূল অবকাঠামো মোঘল স্থাপত্যের অনুপম সৌন্দর্য্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
ধর্মীয় তীর্থ কেন্দ্র আদিকাল থেকেই ধর্মীয় তীর্থ কেন্দ্র হিসেবে কদম মোবারক মসজিদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কদমের ছাপদ্বয় সবসময় পানিতে ডুবানো থাকে। মনোবাসনা পূরণের উদ্দেশ্যে এবং রোগমুক্তির আশায় অনেকে এ পানি ভক্তি সহকারে পান করেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসেন কদমদ্বয়ের ছাপ দর্শন লাভের আশায়।