ঢাকা ২২ অক্টোবর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
আত্মহত্যা বা আত্মহনন একটি সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান নয় আত্মহত্যা বা আত্মহনন একটি সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান নয় ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা: আবির্ভাব হলো টেস্ট টোয়েন্টি দক্ষিণ ভূর্ষি শীতলা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাঞ্চন নাথ, সম্পাদক সুমন দেবনাথ “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা: ছাত্রদল কমিটিতে ‘শিবির সংশ্লিষ্টতার' অভিযোগ পটিয়ায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সমন্বয় সভা পটিয়ায় ভূমি অফিসে দালালবিরোধী অভিযান, এক যুবকের সাজা ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৪২

যে মসজিদে মানুষের সাথে নামাজ পড়তেন জিন

#

২৭ মার্চ, ২০২৩,  4:42 PM

news image

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি 

স্ত্রী মমতাজকে ভালোবেসে তাজমহল গড়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান। টেকনাফের জমিদারকন্যা মাথিন ও পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজের প্রেমগাঁথা হয়ে আছে ‘মাথিনের কূপ’। শুধু তাজমহল কিংবা মাথিনের কূপ নয়, রয়েছে এমন আরো অনেক প্রেমের নিদর্শন। 


এসবের মধ্যে এক ব্যতিক্রমী নিদর্শন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের শোলকাটা গ্রামের ঐতিহাসিক ছুরুত বিবি মসজিদ। সতেরশ’ শতকের এ মসজিদ ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রুতি।


আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ১৫৭৫ সালে দুর্ভিক্ষ ও মহামারিতে গৌড় রাজ্য ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলে রাজ্যের সেনাপতি শেখ মোহাম্মদ আদম গৌড়ী রাজ্য ত্যাগ করে তৎকালীন দেয়াঙ রাজ্যের অন্তর্গত শোলকাটা গ্রামে সপরিবারে বসতি স্থাপন করেন। এ বংশের একজন জমিদার ছিলেন শেখ আমির মুহাম্মদ চৌধুরী। ১০৫১ মঘী সনের এক ‘একরারনামা’ মূলে জানা যায়- আমীর মুহাম্মদ চৌধুরীর ওপর জমিদারির ভার ছিল। 


ইতিহাস গবেষক জামাল উদ্দিনের ‘দেয়াঙ পরগনার ইতিহাস’ গ্রন্থ মতে, আরাকান রাজসভার মহাকবি আলাওলের দ্বিতীয় কন্যা ছুরুত বিবিকে বিয়ে করেছিলেন দেয়াঙ পরগনার মুঘল অংশের দেওয়ান পরিবারের এক জমিদার বাড়ির ছেলে দেওয়ান আমির মোহাম্মদ চৌধুরী। মহাকবি আলাওলের দুই কন্যা। তার মধ্যে ছুরুত বিবি ওরফে শুক্কুর বিবি ছিলেন দ্বিতীয়। বিয়ের পর স্ত্রীর নামেই আমীর মুহাম্মদ চৌধুরী এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। 


ধারণা করা হয়, মুঘল শাসনামলে (১৭১৩-১৭১৮) মসজিদটি নির্মিত হয়। প্রাচীন এ মসজিদকে ঘিরে স্থানীয়দের মনে রয়েছে নানা কথা। এক সময় মসজিদটিতে নামাজ পড়তেন না কেউ। তাদের ধারণা ছিল- জিনেরা এ মসজিদে নামাজ পড়ে। তাই ভয়ে কেউ নামাজ পড়তেন না। ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম মসজিদটিতে নামাজ পড়েন আনোয়ারা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মৌলানা ইদ্রিছ আহমদ।


মসজিদের মোতাওয়াল্লি ও কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বলেন, আমার পূর্ব পুরুষরা ধারাবাহিকভাবে এ মসজিদের মোতাওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দলিল পত্রাদি সূত্রে বংশ পরম্পরায় আমি পঞ্চম মোতাওয়াল্লি।


এ মোতাওয়াল্লি আরো বলেন, এক সময় এ মসজিদে শুধু জোহর আর আসরের নামাজই পড়তেন লোকজন। জনশ্রতি ছিল- এখানে জিনেরা নামাজ পড়ত, তাই সন্ধ্যা হলে এখানে ভয়ে কোনো মানুষ আসতেন না। ১৯৯০ সালের পর থেকে এখানে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন স্থানীয়রা।


অনেকের মতে, এ মসজিদে মানত করলে পূরণ হয় মনের আশা, তাই প্রতি শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মসজিদটিতে ছুটে আসেন।


মসজিদটির স্থাপত্য শৈলীতে রয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম শিল্পধারা। তিনটি ছোট-বড় গম্বুজ আর ৩০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি মিনার। খিলান, আর সু-উচ্চ মিনার বাড়িয়ে দিয়েছে মসজিদের নান্দনিকতা। এ মসজিদে একসঙ্গে প্রায় দেড় হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের দক্ষিণ ও পশ্চিমে রয়েছে বিশাল দুটি দীঘি। দক্ষিণের দীঘিটি ‘ছুরুত বিবি দীঘি’ আর পশ্চিমের দীঘিটি ‘আমীর খাঁ দীঘি’ নামে পরিচিত। 


মসজিদের দক্ষিণ পাশে সারি সারি করে রয়েছে ১২টি কবর। কবরগুলো ছুরুত বিবির পরিবারের সদস্যদের, যাদের মনু মিয়া হত্যা করেছিলেন।


জানা যায়, ছুরত বিবির বিয়ের বছর দেড়েক পর তার ঘর আলো করে আসে দুই সন্তান জাফর খাঁ আর মুজাফফর খাঁ। ছেলেরা একটু বড় হতেই মুঘল সম্রাট তাদের ডেকে নেন দিল্লীতে। হাজার লোক দিল্লীর রাজপথে দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়ে তাদের নিয়ে যায় রাজপ্রাসাদে। সেখানে মুঘলদের পক্ষ থেকে দুজনকে নবাবী সনদ দেওয়া হয়।


আনোয়ারার আরেকজন প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন জবরদস্ত খাঁ ওরফে মনু মিয়া। তিনি ছুরুত বিবির দুই সন্তানের নবাবী সনদ পাওয়াকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। ফলে ছুরুত বিবির দুই সন্তানের জমিদারি পরিচালনায় প্রকাশ্যে ও গোপনে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে থাকেন তিনি। অন্যদিকে, নবীন দুই জমিদারের পক্ষে মনু মিয়ার এসব অন্যায় অপকর্মের প্রতিবাদ করার মতো সাধ্য ছিল না। কারণ সে সময় মনু মিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী আরেক জমিদার নবাব ইয়াছিন খান।


কথিত আছে, ইয়াছিন খানের সহযোগিতায় ছুরুত বিবির দুই সন্তান জাফর খাঁ ও মোজাফফর খাঁকে ধরে নিয়ে যান মনু মিয়া। এরপর তারা আর কখনো ফিরে আসেননি। ঘটনার বেশ কিছুদিন পর চট্টগ্রাম নগরীর কাটা পাহাড় থেকে দুই ভাইয়ের খণ্ডিত মস্তক উদ্ধার করা হয়। 


পরবর্তী সময়ে দুই ভাইকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে দেওয়ান পরিবার আক্রোশে ফেটে পড়ে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হিংস্র ও অত্যাচারী জমিদার মনু মিয়া দেওয়ান পরিবারের আরো ১৬ সদস্যকে তরবারি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে হত্যা করেন। সেই ষোল হত্যাকাণ্ড থেকেই শোলকাটা গ্রামের নামের উৎপত্তি।

logo

প্রধান সম্পাদক : হেফাজুল করিম রকিব

সম্পাদক : নূরুন্নবী আলী