ঢাকা ০৯ নভেম্বর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
পটিয়ায় ইনসানিয়াত বিপ্লব ছাত্র ফ্রন্টের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনুস সহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে অভিয়োগ দায়ের জিরো পয়েন্টে আসার ডাক আ.লীগের, মোকাবিলার ঘোষণা অন্তর্বর্তী সরকারের এই সরকার এনজিও ব্যাকগ্রাউন্ডের নয়: প্রেস সেক্রেটারি হামাস নেতাদের কাতার ছাড়ার নির্দেশের নেপথ্যে কী, কারা? গাজা যুদ্ধে নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু: জাতিসংঘ ট্রাম্পের জয়ে ভবিষ্যতে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক কেমন হবে? যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেকেন্ড লেডি’ হচ্ছেন ভারতীয় উষা ২৭তম বিসিএসে বাদ পড়া ১১১৪ জনের রিভিউ শুনবেন আপিল বিভাগ ভোটে পরাজয় মেনে নিয়েছি, লড়াই ছাড়ছি না: কমলা

মায়ের কিডনিতে বেঁচে ফিরলেন জাহিদ

#

০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২,  2:04 PM

news image
মায়ের কিডনিতে বেঁচে ফিরলেন জাহিদ

নিজস্ব প্রতিনিধি : বিসিএস ক্যাডার হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে ধরবেন পরিবারের হাল। এমনটাই স্বপ্ন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান। 

জাহিদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জাহিদ স্নাতক পাস করার পর পরিবারটি নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল। তারপরই জাহিদের অসুস্থতা ধরা পড়ে। তার দুটি কিডনি বিকল হয়ে যায়। কিডনি প্রতিস্থাপন করার বিকল্প কিছু ছিল না। জাহিদের মা কিডনি না দিলে ভোগান্তি আরও বাড়ত বলে জানিয়েছেন জাহিদের বড় বোন নূর নাহার।

মায়ের দেওয়া কিডনি প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে অবশেষে বেঁচে ফিরলেন মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়া জাহিদ হাসান। মা বুলি বেগমের কিডনি দানের মাধ্যমে পিতৃহীন জাহিদ এবার স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করবেন।

ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সম্পন্ন করে ইতোমধ্যে মা ও ছেলে ফিরেছেন পঞ্চগড়ের গ্রামের বাড়িতে। শরীরে ব্যথা ও দুর্বলতাসহ শারীরিক জটিলতা থাকলেও মা-ছেলে দিন কাটাচ্ছেন হাসিমুখে নিশ্চিন্ত মনে।

জানা গেছে, ২০০৪ সালে ১৮ বছর বয়সে এক বোনের ব্লাড ক্যানসারে মৃত্যু হয়। আবার একই বছরের নভেম্বর মাসে ঘুমের মধ্যে জাহিদের বাবার হঠাৎ মৃত্যু হয়। সেদিন থেকেই নিজের স্বপ্ন যেনো মরে গিয়েছিল জাহিদের। সেই ছোট্টবেলা থেকেই জীবন নামের এক মহাযুদ্ধ অতিক্রম করার পর গত বছরের ১৭ অক্টোবর জাহিদ জানতে পারে, তার দুটি কিডনিই কাজ করছে না।

এর আগে ২০১৯ সালেও একবার জাহিদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছিল। তখন রংপুরে যে চিকিৎসককে দেখেছিলেন, তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেননি বা অন্য কোথাও রেফার করেননি। পরবর্তীতে ২০২১ সালে যখন জাহিদের শরীর খারাপ হয়। একেবারে শেষ ধাপে আর করার তেমন কিছু ছিল না। ১৭ অক্টোবরের পর ১৫ দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জাহিদ। রংপুরের একটি স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গেলে তাও বিফল হয়। এর আগে ক্যাথেটারের মাধ্যমে চারটি ডায়ালাইসিস করা হয়েছিল। জাহিদের জ্বর ছিল। খাবার খেলেই বমি করে দিতেন।

এ অসুস্থতার মধ্যেই গত বছরের নভেম্বরে জাহিদের স্নাতকের ফল প্রকাশ হয়। জাহিদ কৃতিত্বের সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। স্নাতক পাস করার পর তার পরিবার নতুন করে যখন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল ঠিক তখনই জাহিদের অসুস্থতা ধরা পড়ল। তার সহপাঠীরা যখন স্নাতকোত্তরের জন্য শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছেন তখন তিনি জানতে পারলেন তার দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে।

কিন্তু কিডনি কে দেবে এ নিয়ে পড়তে হলো মহা দুশ্চিন্তায়। প্রথমে জাহিদের মা আর বোন কিডনি দেওয়ার জন্য শরীরের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। শেষ পর্যন্ত ১০ মাস ১০ দিন পেটে ধরা নারী ছেঁড়া ধনকে নিজের কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন জাহিদের মা। অন্যদিকে জাহিদকে তার মা কিডনি না দিলে ভোগান্তি আরও বাড়ত। কারণ তখন পর্যন্ত জাহিদের কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা হয়নি।

রংপুর ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার পর গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর শ্যামলীতে সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে (সিকেডি) ভর্তি হন জাহিদ। কিডনি প্রতিস্থাপনের আইনি বিষয় সুরাহার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ সব প্রক্রিয়া শেষে গত ২২ জানুয়ারি রাতে মা ও ছেলের অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের সাত দিনের মাথায় বুলি বেগম হাসপাতাল ছাড়লেও জাহিদ হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ দিনের মাথায়।

কিডনি দানের পর বুলি বেগম বলেন, কিডনি দান করতে এত কষ্ট হবে তা আগে জানা ছিল না। কষ্ট হবে তবে এত কষ্ট হবে তা জানা ছিল না। তবে এ কষ্টের কথা আগে জানলেও আমি আমার ছেলেকে কিডনি দিতাম। মায়ের কাছে সন্তানের জীবনই আগে। সন্তানের জীবন বাঁচানো মায়ের কর্তব্য।

জাহিদের বড় বোন নূর নাহার বলেন, হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর জাহিদের সঙ্গে যখন মায়ের প্রথম দেখা হলো তখন মায়ের চেহারা দেখে মনে হলো তিনি প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছেন। জাহিদও হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বারবার জানতে চাচ্ছিল মা ভালো আছেন কি না।

নূর নাহার বলেন, আমার ভাই হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর তাদের যে আনন্দ হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। প্রথমে ভেবেছিলাম, ভাইকে বাঁচানো যাবে না। এখন আমি আমার ভাইকে স্পর্শ করতে পারছি। ভাই চোখের সামনে, সুস্থ জীবনের পথে হাঁটছে—তার যে অনুভূতি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

সিকেডি হাসপাতালের প্যাকেজে মা ও ছেলের অস্ত্রোপচার, ১১ দিন হাসপাতালে থাকা বাবদ খরচ হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে বিভিন্ন পরীক্ষা ও ওষুধ বাবদ এ পর্যন্ত হাসপাতালে খরচ হয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকা।

নূর নাহার বলেন, এসব টাকা জোগাড়ের জন্য তার ১০ শতাংশ জমি এবং আমাদের পৈতৃক ভিটা কম মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছে।

এদিকে জাহিদের অসুস্থতা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশ-বিদেশের অনেকেই জাহিদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। জাহিদ ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নূর নাহার।

তিনি বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এখন প্রতি মাসে জাহিদের শুধু ওষুধের পেছনে খরচ হবে ৩০ হাজার টাকা। জাহিদ ও তার মায়ের ফলোআপ, খাওয়া-দাওয়াসহ বেশ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হবে। তবে এ মুহূর্তে তাদের হাতে যে টাকা আছে, তা দিয়ে কয়েক মাস চালাতে পারব।

logo

সম্পাদক : হেফাজুল করিম রকিব

নির্বাহী সম্পাদক : শাহ এম রহমান বেলাল