ঢাকা ২২ অক্টোবর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
আত্মহত্যা বা আত্মহনন একটি সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান নয় আত্মহত্যা বা আত্মহনন একটি সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান নয় ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা: আবির্ভাব হলো টেস্ট টোয়েন্টি দক্ষিণ ভূর্ষি শীতলা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাঞ্চন নাথ, সম্পাদক সুমন দেবনাথ “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা: ছাত্রদল কমিটিতে ‘শিবির সংশ্লিষ্টতার' অভিযোগ পটিয়ায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সমন্বয় সভা পটিয়ায় ভূমি অফিসে দালালবিরোধী অভিযান, এক যুবকের সাজা ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৪২

বাঁশখালীতে এতিমের অর্থ হরিলুটের অভিযোগ

#

নিজস্ব সংবাদদাতা

৩০ মার্চ, ২০২৩,  2:15 PM

news image

জসিম উদ্দিন, বাঁশখালী প্রতিনিধি:- বাঁশখালীর ছনুয়া খুদুকখালী রহমানিয়া বায়তুল হিফজ শিশু নিবাসের পরিচালকের বিরুদ্ধে ভুয়া এতিম ছাত্র দেখিয়ে 

ক্যাপিটেশনগ্রান্ট প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ-১৯৬১ অনুযায়ী, নিবন্ধন প্রদান এবং পরবর্তীতে নিবন্ধন প্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানা গুলোর শিশুদের প্রতিপালন, চিকিৎসা এবং শিক্ষা প্রদানের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয়, যা ক্যাপিটেশনগ্রান্ট নামে পরিচিত।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে ছনুয়া খুদুকখালী আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন মাওলানা মুফতি আবু তৈয়ব। এরপর থেকে মাদ্রাসাটিতে নানা অনিয়ম লেগেই আছে। অপর দিকে শিশু নিবাসে প্রকৃত এতিম না থাকায় ছনুয়া খুদুকখালী আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্রদের নাম দিয়ে প্রতিমাসে দুই লক্ষ টাকা আত্মসাত ও সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে পরিদর্শনে আসলে আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্রদের দেখান তিনি। নীতিমালা অনুযায়ী ভুঁয়া এতিমদের জন্য কোনো শিক্ষক ও ক্লাস রুটিন নেই। আবু তৈয়ব যোগদান করার পর থেকে শিশু নিবাসে প্রকৃত এতিম ভর্তি না করিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের এতিম সাজিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করে যাচ্ছেন।

শুধু তাই নয়, আজ অবধি সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী কমিটি গঠন ও সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়নি ওই শিশু নিবাসে। মাদ্রাসা পরিচালক  আবু তৈয়বের পছন্দের কয়েকজন ব্যক্তি নিয়ে শিশু নিবাসের পরিচালনা কমিটির কাগজপত্র প্রস্তুত করে সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা দেন।

অপর দিকে ছনুয়া আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত। পরিদর্শক গেলে ওই মাদ্রাসার ছাত্রদের এতিম সাজানো হয়।

জানা যায়, ১৯৮৩ সালে খুদুকখালীর শিক্ষানুরাগী মাওলানা আমান উল্লাহ রহমানিয়া বায়তুল হিফজ শিশু নিবাসটি প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছর সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায় এতিমখানাটি। রেজিষ্ট্রেশন নং-১০৩১/৮৩। ওই এতিমখানায় কাগজে-কলমে ৬৪ জন এতিম শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে। তাদের জন্য প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে বছরে ২৪ লাখ টাকা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সরকারি অনুদান পেয়ে আসছে। সরকারি ভাতা ৬৪ জন পায় দাবি করলেও সরেজমিনে মাদ্রাসায় ৬৪ জন এতিম পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এতিমখানার ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রকল্পে এতিম ছাত্রদের তালিকা তৈরি, অর্থগ্রহণ ও বণ্টনে মানা হয়নি সরকারি নীতিমালা। মাদ্রাসায় পড়া শিক্ষার্থীদের প্রায় সবারই বাবা-মা জীবিত আছেন এবং তারা বেশ স্বাবলম্বী । তাদেরও গ্রান্ট ক্যাপিটেশন এতিম হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রতিবার বরাদ্দ দেয়ার আগে সমাজসেবা অধিদপ্তর এসব এতিমখানা পরিদর্শনের পর টাকা দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই এতিমখানায় প্রকৃত এতিম রয়েছে ৮ থেকে ১০ জন। বাকিদের ভুঁয়া এতিম সনদ দিয়ে সরকারি অর্থ বরাদ্দ নিয়ে আত্মসাৎ করছেন। তবে এতিমখানার পরিচালকের দাবি, এসব ছাত্রদের পিতা-মাতা থাকলেও তাঁরা গরীব।

ওই শিশু নিবাসের ছাত্র মনির উদ্দিন  (ছদ্মনাম)বলেন, ‘আমার বাবা-মা জীবিত আছেন। বাবা পেশায় লবণ চাষি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এতিম সনদ সংগ্রহ করে ভর্তি হয়েছি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খুদুকখালী রহমানিয়া বায়তুল হিফজ শিশু নিবাসের পরিচালক মাওলানা মুফতি আবু তৈয়ব বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসায় প্রায় এক হাজারের ওপরে ছাত্র-ছাত্রী আছে। বলতে গেলে সবাই এতিম। কারণ, এখানে তো মনুমিয়াজী বাড়ির ছেলেরা লেখাপড়া করে না। মাঝির বাড়ির ছেলেরা লেখাপড়া করে না। চেয়ারম্যান হারুনের ছেলেরা লেখাপড়া করে না। এখানে যারা লেখাপড়া করে, তাঁরা সবাই গরীব। প্রকৃত এতিমের সংখ্যা হচ্ছে ১৪০ জন। প্রতিমাসে আর্থিক সহায়তা পাই না। সরকারি অনুদান পাই বছরে ২ বার।

অনিয়মের প্রতিবাদ করায় রিদুয়ানুল হক নামের এক ব্যক্তিকে নিজ মাদ্রাসার ছাত্র দিয়ে মারধর করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে মারধর করিনি। বিষয়টি আমরা স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার চেষ্টা করেছি। এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেতেছে। ওই মামলায় আমরা সবাই জামিন নিয়েছি।

এতিমখানার পরিচালক আবু তৈয়ব এতিমের সংখ্যা ১৪০ জন দাবি করলেও বাঁশখালী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাকিফ ইশমাম চৌধুরী বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বললেন, ওই মাদ্রাসায় উপকার ভোগীর সংখ্যা ৬৪ জন। তবে ৬৪ জনের তালিকা দেখাতে রাজি হননি তিনি। তালিকা চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ সরকারি কাগজপত্র শেয়ার করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটা জানার বিষয় আছে। আচ্ছা আমি পর্যালোচনা করে দেব আর কি। এটা তো সরকারি ডকুমেন্টস। এটা দিতে কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কিনা, যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ঐটা নিয়ে আমরা তদন্ত পরিচালনা করছি। ইউএনও স্যারের কাছে বিষয়টি পেন্ডিংয়ে আছে। তদন্ত করে ওটার যে অবস্থা জানাবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই এতিমখানার প্রথম কিস্তি ও ২য় কিস্তি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এটা ভালো করে দেখেশুনে তারপর দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল আলম বলেন, ‘ওই শিশু নিবাসে অনিয়মের বিষয় নিয়ে একটা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

logo

প্রধান সম্পাদক : হেফাজুল করিম রকিব

সম্পাদক : নূরুন্নবী আলী