ঢাকা ১৬ অক্টোবর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
দক্ষিণ ভূর্ষি শীতলা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাঞ্চন নাথ, সম্পাদক সুমন দেবনাথ “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা: ছাত্রদল কমিটিতে ‘শিবির সংশ্লিষ্টতার' অভিযোগ পটিয়ায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সমন্বয় সভা পটিয়ায় ভূমি অফিসে দালালবিরোধী অভিযান, এক যুবকের সাজা ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৪২ পটিয়ায় একই দিনে অজ্ঞান পার্টির প্রতারণা ও দরজা কেটে ১৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে স্বর্ণালংকার- নগদ টাকা হারালেন বৃদ্ধা পটিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় দুই চুরি, এক আত্মহত্যা : চরম উৎকন্ঠায় স্থানীয়রা

বহুমুখী প্রতারক ফরহাদ_অবশেষে গ্রেফতার পুলিশের হাতে

#

নিজস্ব সংবাদদাতা

১২ এপ্রিল, ২০২৩,  4:46 AM

news image

মোরশেদ আলম:- ।বিদেশে নেয়ার প্রলোভন, ব্যবসায় অংশীদার করা, চাকরি দেওয়া, স্বর্ণ ব্যবসায়ী, ঋণ পাইয়ে দেওয়া, কিষোয়ান, থাই ফুড, ওয়েল ফুডসসহ বিভিন্ন নামীদামী প্রতিষ্ঠানের ডিম সরবরাহের কাজ পাইয়ে দেওয়াসহ,  কখনো এডভোকেট, কখনো ডিবি কিংবা কখনো ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন কৌশলে প্রতারণা করতেন ফরহাদ উদ্দীন চৌধুরী ওরফে ফরহাদ (৩৫)। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ কাজ করতে গিয়ে তিনি কখনও শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক-শিল্পপতির আত্মীয়, কখনও ব্যারিস্টারের ছেলে পরিচয় দিয়ে আসছেন। এভাবে তার প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসেছেন কয়েক শতাধিক মানুষ। এছাড়াও তার প্রতারণার শিকার হয়ে সবকিছু হারিয়ে নিস্ব হয়ে’ স্টক করে মারা গেছেন পটিয়া পৌর এলাকার একজন। অভিনব এক অঙ্গে বহু রুপ। দিনের পর দিন প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা, এমনকি দোকানদার হতে স্বর্ণ, মোটর সাইকেল, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ফার্নিচারসহ লাখ লাখ টাকার পণ্যও।

শুধু তাই নয়, প্রতারণার ফাঁদ পেতে শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরি দেয়া, মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা দেওয়া, সাধারণ ব্যবসায়ীদের দ্বিগুণ টাকার লোভ দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ জালিয়াতির আরও চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সিএমপি পুলিশ কমিশনার, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি), সিআইডি, পটিয়া, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, বাঁশখালী ও কর্ণফুলী থানায় রয়েছে কয়েক ডজনেরও বেশি অভিযোগের ফিরিস্তি। কিছু কিছ জায়গায় মামলা অভিযোগ হলেও বারংবার আইনের চোখকে ফাকিঁ দিয়ে বীরদর্পে প্রতারণা করে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতারনার শিকার হওয়া বাঁশখালী উপজেলার পারভিন আক্তার ও কর্ণফূলী উপজেলার এক ভুক্তভোগীর করা মামলায় পটিয়া ছনহরা এলাকা থেকে তাকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৪নং দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ২৮জন ব্যবসায়ীকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নেয় প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা এবং ইপিজেড বন্দর এলাকা হতে ২১ (একুশ) লক্ষ টাকা, কর্ণফুলী এলাকা হতে ২(দুই) লক্ষ ৩৫ হাজার, পটিয়া পৌর এলাকার মো. জিয়ার কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা, জরিনা বেগমের কাছ ১২ লক্ষ ৮০ হাজার। এভাবে পটিয়া, আনোয়ারা, চকরিয়া, মীরসরাই উপজেলা হতে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে নগদ অর্থ ও মুল্যবান জিনিসপত্র। ঘটনার পর ভোক্তভোগীরা তাদের কষ্টে অর্জিত অর্থ ফেরত চাইলে নিজেকে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার ভাগ্নে ও দেশের এক বড় ব্যবসায়ীর ভাতিজা পরিচয়ে গুম করে ফেলারও হুমকি দেয়। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে কৌশলে চেক নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে উল্টো চেক প্রতারণার মামলা, অপহরণের নাটক সাজানোরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিনব এই প্রতারকের ফাঁদে পড়ে যারা সর্বস্ব হারিয়েছেন। তাদের কয়েকজনের নাম আমাদের প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

ডিম ব্যবসার কথা বলে দ্বিগুন লাভের লোভ দেখিয়ে কর্ণফুলী উপজেলার হাজী টাওয়ার মিষ্টিমূখের মালিক জাহাঙ্গীর আলম হতে ২ (দুই) লক্ষ টাকা, রাঙ্গুনিয়ার খোরশেদ তালুক গ্রামের মোহাম্মদ নুরুল আলমের পুত্র মোহাম্মদ সেলিম হতে ৬ (ছয়) লক্ষ টাকা, জালাল ফকির পাড়ার বদিউল আলমের পুত্র মোঃ নজরুল ইসলাম হতে ১ (এক) লক্ষ ৮০হাজার, কাজী পাড়া গ্রামের ইসকান্দরের পুত্র মোঃ আনাস হতে ১ (এক) লক্ষ ১০হাজার, খোরশেদ তালুক পাড়ার রুহুল আমিনের পুত্র মোঃ জামাল হতে ১ (এক) লক্ষ ৮০ হাজার, একই পাড়ার কুতুব উদ্দিনের পুত্র মোঃ সাব্বির হতে ১ (এক) লক্ষ ৫০হাজার, চরপাথরঘাটার সাম্পান চালক শুক্কুর হতে ৩৫হাজার, কাজী পাড়ার আবুল কাশের এর পুত্র মোঃ মাসুদ হতে ২ (দুই) লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনকি একই প্রতারক মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা দিবে বলে রাঙ্গুনিয়ার কোদালা স্বর্ণের দোকান মালিক অজিত মহাজনের পুত্র বিঞ্চু বনিক হতে ১ (এক) লক্ষ ৪৭ হাজার ৩২৫ টাকা, ঘাটচেক পৌর এলাকার ছাবের সওদাগরের পুত্র মোঃ ইসমাঈল হতে ৭০ হাজার, একই এলাকার মোঃ জামালের পুত্র জাহেদ হতে ৫০ হাজার, আকবর তালুকদার বাড়ির আব্দুল বারেকের পুত্র দিদার হতে ১০ হাজার, তালুক পাড়ার আহম্মেদ হোসনের পুত্র মোঃ সিরাজ হতে ২৫ হাজার, কাজী পাড়ার ফরিদুলের পুত্র আনিছ হতে ৩৫ হাজার টাকা প্রতারণাপুর্বক আতœসাৎ করে। এমনকি ব্যাংক হতে লোন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কয়েকশত লোকের কাছ থেকে নগদ টাকা ও চেক নিয়ে প্রতারণার তথ্য মিলেছে।

ফরহাদ কতৃক প্রতারণার শিকার মো. জিয়া বলেন,“এই ডিম ব্যবসায়ী প্রতারকের শিকার হয়ে আমি স্বর্বশান্ত হয়ে গেছি। আমার দোকানে কর্মচারী থাকাকালীন আমার সাথে প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে চেক নিয়ে আমাকে নিস্ব করে দিয়েছে। এমনকি অপহরণের নাটক সাজিয়ে আমাকে সে(ফরহাদ) জেল কাটিয়েছে। প্রতারণার শিকার পটিয়া পৌর এলাকার জরিনা বেগম জানান, আমার ছেলেকে ভিসা দিবে বলে ১৩ লক্ষ টাকা সে নেই। আমার ছেলেকে ভিসা না দিয়ে প্রতারণার জাল বিছিয়ে সে আমাদের নিস্ব করে দেই। তিনি কেঁদে বললেন, এই টাকা গুলোর দায় দেনা বেড়ে যাওয়ায় আমার স্বামী ২০২০ সালে স্টোক করে মারা যায়। আমি তার বিচার চাই।

এই বিষয়ে পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার জানান, গ্রেফতার হওয়া ফরহাদ উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আবু তালেবের পুত্র। তার প্রতারণার গভিরতা বিশাল। তার প্রতারনায় নিস্ব হয়ে গেছে কয়েকশত মানুষ। আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। তাকে আদালতে পাঠাব।

logo

প্রধান সম্পাদক : হেফাজুল করিম রকিব

সম্পাদক : নূরুন্নবী আলী