নিজস্ব সংবাদদাতা
০৮ অক্টোবর, ২০২৪, 3:32 PM
বন্যা কবলিত এলাকা যেন পর্যটন স্পট
চারপাশে পানি, মাঝখানে পিচঢালা পথ—এ দৃশ্য এখন শেরপুরের বন্যা দুর্গত এলাকায়। তবে, এসব দৃশ্য ঘুরতে আসা মানুষেরা যেন ভুলে গেছেন, এই পানির মাঝে কত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লুকিয়ে আছে। গত চারদিনে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত শেরপুরের বিভিন্ন এলাকা এখন অনেকের কাছে পিকনিক স্পট হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি থামলেই শেরপুর জেলা শহর থেকে ঝিনাইগাতী, তিনানী ও নালিতাবাড়ী সড়কে উৎসুক মানুষের বাইক ও প্রাইভেটকারের জট তৈরি হচ্ছে। এর ফলে ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবীদের পিকআপ ও ট্রাকও আটকে পড়ছে। অনেকেই ফেসবুক ও ইউটিউবের জন্য কন্টেন্ট বানাতে ভিড় করছেন বন্যা দুর্গত এলাকায়, যাদের বেশিরভাগই পানিবন্দিদের বিরক্ত করছে অযাচিত প্রশ্ন করে। এতে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ।
সোমবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন এলাকায় এসব কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ভিড় দেখা গেছে।
রোববার দুপুরে ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী মশিউর রহমান সজীব। বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন এলাকার পর্যটকদের গাড়ির জ্যামে আটকা পড়েন শেরপুর-ঝিনাইগাতী সড়কের কাটাখালী এলাকায়। এ সময় তাদের ত্রাণবাহী ট্রাকটি অন্তত দশ মিনিট আটকে ছিল।
এ সময় সজীব বলেন, এই সড়কটি কখনোই এতটা ব্যস্ত হয় না। প্রশস্ত রাস্তায় একাধিক গাড়ি একসঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত ও অভারটেকিং করতে পারে। অথচ বন্যা দেখতে আসা উৎসুক মানুষদের গাড়ি এলোমেলো করে রাখার কারণে এই জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে।
একইসময় শেরপুরের বাইরে থেকে আসা আরও বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ত্রাণবাহী গাড়িও জ্যামে আটকে থাকতে দেখা যায়। মৈ ফাউন্ডেশনের নারী স্বেচ্ছাসেবী রাজিয়া খান বলেন, আমরা ঢাকা থেকে সারাদিন জার্নি করে এসেছি ত্রাণ দিতে। এখন এই রাস্তায় জ্যামে আটকে আছি। এটা আসলেই দুঃখের বিষয়। মানুষ এই দুঃসময়েও কিভাবে এত চিল করতে পারে?
দড়িকালীনগর এলাকার মজিদ মিয়া বলেন, রাস্তা তলাইয়া গেছে। বাড়ি ঘরে পানি উঠছে। না খাইয়া আছি দুই দিন ধরে। কোনো ত্রাণের খবর নাই, অথচ বাড়ির সামনের গজারমারী ব্রিজে সারাদিনই পুলাপানের ভিড়। সবাই ছবি তুলতাছে, ভিডিও বানাইতাছে। বাড়িত পানি উঠছে, বাড়ির মহিলারা বাড়ির সামনের ব্রিজে যাইয়া একটু বসবো, সেই সুযোগটাও নাই।
বন্যার কারণে শেরপুরের পাঁচ উপজেলার দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কৃষকের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ২৪২টি প্রাথমিক এবং ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার সকালে ঝিনাইগাতী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পার্শ্ববর্তী নকলা ও নালিতাবাড়িতে এখনও পরিস্থিতি গুরুতর। উদ্ধার তৎপরতায় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও সেনাবাহিনী কাজ করছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।