পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালচক্রের শক্তিশালী সিন্ডিকেট
নিজস্ব সংবাদদাতা
২৫ অক্টোবর, ২০২২, 3:04 PM

নিজস্ব সংবাদদাতা
২৫ অক্টোবর, ২০২২, 3:04 PM

পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালচক্রের শক্তিশালী সিন্ডিকেট
পটিয়া প্রতিনিধি:- পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালাল চক্রের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিয়মিত রোগী ভাগিয়ে নিয়ে আশপাশের বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তৎপর থাকে এ চক্রটি। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই বিভিন্নভাবে হয়রানীর শিকার হতে হয়। চক্রের এ সদস্যদের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স ও ডাক্তাররাও।
এ সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত কয়েকজন ডাক্তার ও মেডিকেল কর্মকর্তা। যাদের কলখাটিতেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে হাসপাতালের। গত কয়েকটিন ধরে সরেজমিন প্রতিবেদনে উঠে আসে এসব তথ্য।
জানাগেছে, চলতি মাসের ৯ অক্টোবর দুপুরে একজন প্রসূতি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ভর্তির পর তার অবস্থার অবনতি হয়। ওইদিন ঈদে আজম (১২ রবিউল) উপলক্ষে সরকারী বন্ধ থাকায় হাসপাতালে কোন কনসালটেন্ট দায়িত্বরত ছিল না। যার কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডিউটি ডাক্তার শারমিন আকতার তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ছাড় পত্র দেয়।
এসময় পটিয়ার একটি বেসরকারী হাসপাতালের রুবেল ও তিলক নামের দুইজন দালাল ও চক্রের সদস্য এ রোগীকে তাদের পছন্দের প্রাইভেট হাসপাতালে ভাগিয়ে নিতে চেষ্টা করে। পরে তারা ব্যর্থ হয়ে কৌশলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স নুর নাহারকে জড়িয়ে ভিডিও করে তা ফেইক আইডির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। এ দুই দালাল চক্রের সদস্যের ছবি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিসিটিভি ফুটেজে উঠে আসে। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের এ সদস্যরা কৌশলে এ ফেইক আইডি থেকে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার কর্মরতদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করার অপচেষ্টা চালায় বলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত নার্স নুর নাহার বেগম জানান।
সূত্রে আরো জানাযায়, দালালচক্র বেপোরোয়া হয়েও মেডিকেলে আসা রোগীদের তাদের কন্টাক্টচুয়াল প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে ভর্তি করানোর জন্য টানা হেছড়া করতে থাকে প্রতিদিন। এমন কর্মকান্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হয়ে আসলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটিতে থাকা (গত ৯ অক্টোবর) ডাক্তার শারমিন আকতার জানান, ওইদিন যে প্রসূতি রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিল কিছুক্ষণ পর তার অবস্থা খারাপের দিকে যায়। তার একঘন্টার মধ্যে অপরেশন করা জরুরী হয়ে পড়ে। ওইদিন সরকারী বন্ধ থাকায় হাসপাতালে কোন কনসালটেন্টও উপস্থিত ছিল না। যার কারণে তাকে চমেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স নুর নাহার জানান, আমি একজন সাধারণ নার্স। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া কোন রোগীকে ভাগিয়ে নিয়ে বেসরকারী হাসপাতালে পাঠানো আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে একটি স্বাস্থ্যন্বেষী মহল তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সব্যসাচী নাথ জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একটি ভিডিও আমার মোবাইলে পাঠিয়েছে। তবে ওইদিন সরকারী বন্ধ ছিল। যথাযথ তথ্য না জেনে হাসপাতালের কোন নার্সকে ছোট করা যাবে না। তাই এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে।
#এনএল