ঢাকা ২১ অক্টোবর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা: আবির্ভাব হলো টেস্ট টোয়েন্টি দক্ষিণ ভূর্ষি শীতলা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাঞ্চন নাথ, সম্পাদক সুমন দেবনাথ “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম “টাইফয়েড এখনো মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা"—সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা: ছাত্রদল কমিটিতে ‘শিবির সংশ্লিষ্টতার' অভিযোগ পটিয়ায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সমন্বয় সভা পটিয়ায় ভূমি অফিসে দালালবিরোধী অভিযান, এক যুবকের সাজা ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৪২ পটিয়ায় একই দিনে অজ্ঞান পার্টির প্রতারণা ও দরজা কেটে ১৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে স্বর্ণালংকার- নগদ টাকা হারালেন বৃদ্ধা

পটিয়ায় শ্রীমাই খাল ভরাট করে মাটি কাটছে ‘প্রভাবশালীচক্র’-নৈপত্যে এমপির ভাই

#

নিজস্ব সংবাদদাতা

১৭ মার্চ, ২০২৩,  12:27 AM

news image

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:- চট্টগ্রামের পটিয়া শ্রীমাই খাল ভরাট করে বালু ইজারা মহালের নামে রাত-দিন চলছে মানুষের কৃষি জমির টপসয়েল কাটা। প্রশাসন বিষয়টি জানলেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে জানান স্থানীয়রা। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় সাংসদ হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপির ভাই নবাব চৌধুরীর নির্দেশে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় এই মাটি কাটা চলছে। এতে ফলে কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনি এর ফলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন ও ফসল বৈচিত্র মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। জাতীয় সংসদের হুইপ ও পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরী ধানি জমি থেকে টপ সয়েল কাটা বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিলেও তার ভাইয়ের নির্দেশে এক শ্রেণির দালালরা ফসলি জমির টপসয়েল কেটে উজাড় করছে। সরেজমিন বুধবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই খাল ভরাট করে ফসলি জমির মাটি কেটে উজার করে দিচ্ছে একটি চক্র। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে মুহূর্তেই স্কেবেটর ও পিকআপ বন্ধ করে চলে যায়। একজন স্কেভেটর চালক আমাদের দেখে ছুটে আসে এবং জানতে চাই আমরা কে। পরিচয় দেওয়ার এক পর্যায়ে মোতাহেরুল ইসলাম বাছা নামের একজনকে মোবাইল ফোনে ধরিয়ে দেই। অবৈধভাবে ফসলি জমি কাটার লাইসেন্স কে দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো নবাব আংকেল (এমপির ভাই) এর নির্দেশে কাটা হচ্ছে। প্রশাসন সব জানে। আমরা ডিসি অফিস থেকে এই মাটি কাটার লিজ নিয়েছি। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতি বছর শুকনো মৌসুমের শুরুতে পটিয়া উপজেলার কেলিশহর, হাঈদগাও, কচুয়াই, খরনা, শোভনদন্ডী, ছনহরা, ভাটিখাইন, ধলঘাট, কোলাগাঁও সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মানুষের ধানি ফসলি জমি থেকে টপ সয়েল কাটার ব্যবসা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র। বেশিরভাগ ইটভাটা ও বসতভিটায় টপ সয়েলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের (জমির মালিক) বিভিন্ন কৌশলে প্রলুব্ধ করে জোরপূর্বক সামান্য অর্থের বিনিময়ে তা উজাড় করে বড় বড় প্রজেক্ট ভরাটের কাজে ব্যবহার করছে।। ফলে কৃষকরা ধরে রাখতে পারছেন না তাদের জমির স্বাভাবিক ফলন। কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস, আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামসহ বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি হচ্ছে। মাটি কেটে নিষিদ্ধ ট্রাক, ড্রাম, মিনি পিকআপ ও ট্রলি ভর্তি করে চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং ধ্বংস হচ্ছে কৃষি জমি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাটি কাটার গভীরতার পরিমাণ ৮ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে কোথাও কোথাও অনৈতিক আগ্রাসনে পার্শ্ববর্তী মালিকের জমিও নষ্ট হচ্ছে। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় যে কোনো ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশেই যে কোনো ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসলটি প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করে। এই অংশটি একবার কেটে নিলে সে জমির আর মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। এমনকি ওই জমিতে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে কোনো ফসল বেড়ে উঠবে না। এতে জমিটি পরিত্যক্তই হয়ে যায়। এদিকে গত বুধবার রাতে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. রাকিবুল ইসলাম পটিয়া পৌর ৪নং ওয়ার্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাটি কাটার ৫টি ট্রাক জব্দ করে তবে কোন মামলা মোকাদ্দামা কিংবা দোষিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান বলেন, সাধারণ কৃষকদের অসচেতনতার সুযোগে এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষি সম্পদের সর্বনাশ করছে। এ ব্যাপারে মাঠ পরিদর্শন করে শিগগির কৃষকদের বুঝানোর চেষ্টা করা হবে। ছনহরা ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্ধা রকি ভট্ট্যাচার্য বলেন, চাকুরির সুবাধে আমরা শহরে ভাড়া বাসায় থাকি। মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসি। আমার পৈতৃক ২০ শতাংশ ফসলি জমি রয়েছে। আমাদের অনুপস্থিতি টের পেয়ে ছনহরার মাটি খেকো ওসমান আলমদার ও আরিফ রাতের আধারে গত সোমবার সব মাটি কেটে নিয়ে যায়। আমাদের ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমি এসিল্যান্ড মহোদয়কে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। পটিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. মামুন জানান, যে সমস্ত জায়গায় মাটি কাটছে, আমরা খবর পেলেই অভিযান পরিচালনা করছি। যাতে করে পটিয়া উপজেলায় কৃষি জমি থেকে টপ সয়েল কাটতে না পারে সেজন্য এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।


logo

প্রধান সম্পাদক : হেফাজুল করিম রকিব

সম্পাদক : নূরুন্নবী আলী