নিজস্ব সংবাদদাতা
৩০ অক্টোবর, ২০২৪, 7:29 PM
পঞ্চদশ সংশোধনীর রুলে পক্ষভুক্ত হতে ইমাম হায়াতের আবেদন
মোরশেদ আলম:- তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এ মর্মে জারি করা রুলে পক্ষভুক্ত হতে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা ইমাম হায়াত।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আবেদনটি শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান ইমাম হায়াতের পক্ষের অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ।
আইনজীবী আব্দুর রউফ বলেন, আবেদনকারী ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা ইমাম হায়াত সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল চান এ কারণে তিনি আবেদনটি করেছেন।
এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলে বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার পক্ষভুক্ত হয়েছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৬ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন আদালত। বুধবার রুলের প্রথমদিনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ দিন ঠিক করেন।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট জনস্বার্থে পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তির করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। পরে আবেদনকারী পক্ষ রুলটি শুনানির জন্য বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন কোর্টে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালত রুল শুনানির জন্য ৩০ অক্টোবর দিন রেখেছিলেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। অন্য চারজন হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এরপর এ রুলের ওপর মতামত দিতে বিএনপি ও জামায়াত যুক্ত হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনে (২০১১) বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয় ওই সংশোধনীর মাধ্যমেই।
১৯ আগস্ট আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে আছে একসঙ্গে অনেকগুলো অনুচ্ছেদে পরিবর্তন বা সংশোধনী আনতে হলে গণভোট করতে হবে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু কোনো গণভোট করা হয়নি। গণভোট না করে সংশোধনী পাস করা সংবিধান পরিপন্থী।
তাছাড়া ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত মামলার লিখিত সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ বলেছিলেন, পরবর্তী দুটি (দশম এবং একদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। কিন্তু সেই আদেশকে অমান্য করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না করে দলীয় সরকারের অধীনে করা হয়। এ কারণে পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগের আদেশের সাথেও সাংঘর্ষিক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিপন্থী বলেও জানান আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া।