নকল মবিলে বিকল হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবহন মালিকরা
০৯ মার্চ, ২০২৩, 10:14 PM

NL24 News
০৯ মার্চ, ২০২৩, 10:14 PM

নকল মবিলে বিকল হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবহন মালিকরা
মোঃ কামাল উদ্দিন চকরিয়া ( কক্সবাজার)
বিভিন্ন গাড়ির পুরাতন টায়ার, প্লাস্টিকের দানা, পোড়া মবিল, কেরোসিন তেল ও এক ধরনের রিফাইনিং মেডিসিন একত্রে জ্বাল দিয়ে উৎপাদন হচ্ছে ভেজাল মবিল। আবার কখনো কখনো নিম্নমানের মবিল কিনে দামি ব্রান্ডের বোতলে ভরে সেগুলো বাজারে সরবরাহ করছে একটি প্রতারক চক্র। এতে যানবাহনের মালিকই শুধু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা কিন্তু নয়। সেই সাথে বিকল হচ্ছে দামি যানবাহনের যন্ত্রাংশ। ভেজাল মবিলের কারনে যে কোনো গাড়ি যে কোনো সময় বিস্ফোরণেরও শঙ্কা রয়েছে।
নকল-ভেজাল মবিলে চকরিয়ার সর্বত্র ছেয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নিয়মিত ‘মাসোহারা’ দিয়ে বছরের পর বছর এ ধরনের অনৈতিক ব্যবসা করে চলছে একটি চক্র। ফলে, ভেজাল মবিল সরবরাহ কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না এবং প্রতারক চক্র দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ভেজাল মুবিল সরবরাহ ও বিক্রয়। এ বিষয়ে কয়েকজন গাড়ির ইঞ্জিন মেস্ত্রীর সাথে কথা বললে তারা বলেন, প্রতারকচক্র বিভিন্ন কৌশলে মবিল নকল করে। বিশেষ করে প্রথমে গাড়িতে ব্যবহৃত পোড়া মবিল তারা সংগ্রহ করে। ওইসব মবিল বিশেষ ক্যামিকেলের মাধ্যমে রিফাইন করে। পরে এসব নকল মবিলই বোতলে কিংবা জারে ভরার পর হয়ে যায়, বিদেশি ব্রান্ডের টোটাল, সুপার-ভি, জেঅন-৬৮, সুপারভিসিনো, এইস ডি, ভিপি সুপার, ন্যাশনাল সুপার, , মবিল সুপার, ইঞ্জিন ওয়েল ও জেনারেটর ওয়েল। সাইকেল গ্যারেজ, গাড়ির ওয়ার্কশপ, মোটরসাইকেল পার্টসের দোকান, পেট্রোলিয়ামের দোকান, মুদির দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকানে বিক্রি হচ্ছে ওই তেল, মবিল বা লুব্রিকেন্ট। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ওইসব নকল মবিল ব্যবহারে দামি গাড়িগুলোর যন্ত্রপাতি খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরনের ভেজাল মবিলে যানবাহনে ক্রটি ছাড়াও যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা থকে। মাঝেমধ্যে চলন্ত পথে অনেক যানবাহন বিকল কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ভেজাল মবিলের কারনেই এসব হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সিকদারপাড়া এলাকার মোঃ মানিক নামের এক ডাম্পার গাড়ির মালিক অভিযোগের সুরে বলেন, গত ১৭ই ফেব্রুয়ারী তার মালিকানাধীন গাড়ির মুবিল পরিস্কার করার জন্য তার গাড়ির ড্রাইভার জসিম উদ্দিনকে সাথে নিয়ে চকরিয়া শহীদ আবদুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনালস্থ নিউ চৌধুরী মোটরস নামের একটি গাড়ির পার্টস ও ইঞ্জিন অয়েল বিক্রির দোকান থেকে ৮ হাজার ৫শ ৫০ টাকার মবিল ক্রয় করে মোঃ রুবেল নামের এক ইঞ্জিন মেস্ত্রীর মাধ্যমে মবিল পাল্টানো হয়। পরে মবিল পাল্টানোর ৩দিনের ব্যবধানে ইঞ্জিনের সকল মুবিল শুকিয়ে যায়। গাড়ির মুবিল শুকিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ইঞ্জিন মেস্ত্রী মোঃ রুবেলের কাছে জানতে চাইলে নিউ চৌধুরী মটরস থেকে ক্রয়কৃত মুবিল ২ নং বলে প্রমাণিত হয়। ফলে এ মুবিল ব্যবহারের কারণে আমার গাড়ির ৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ইঞ্জিনটি বিকল হয়ে হয়ে যায় এবং যা মেরামত করতে আমার ২ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন হয়। পরে এ বিষয়ে ২০ই ফেব্রুয়ারী সকাল ১১টার দিকে আমরা নিউ চৌধুরী মোটরসে গিয়ে দোকানটির স্বত্বাধিকারী মোঃ গণি মোসাদ্দেক এর কাছে ক্ষতিপূরণ এর কথা বলে প্রতিবাদ করলে মারধর করে লাশ গুম করবে বলে হুমকি প্রদর্শন করে। পরে কোন কুল-কিনারা না পেয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শে নিউ চৌধুরী মোটরসের স্বত্বাধিকারী মোঃ গণি মোসাদ্দেক কে আসামী করে চকরিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এদিকে, এ বিষয়ে জানতে নিউ চৌধুরী মোটরসের স্বত্বাধিকারী মোঃ গণি মোসাদ্দেকের সাথে যোগাযোগ করা হলে, ২নং মুবিল বিক্রির কথাটা তিনি অস্বীকার করেন এবং তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের ব্যবসায় আমার প্রতিষ্ঠানের কোন দূর্নাম নেই। এ ধরনের বিষয়টি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। আমার প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কেউ এমনটা করছে।
অপরদিকে, এ বিষয়ে আরো কয়েকজন গাড়ির মালিকের সাথে কথা বললে তারা প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান, নকল মবিল কারখানা ও সরবরাহকৃত দোকানগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে এ ধরণের প্রতারণা বন্ধ করা হোক। এছাড়াও প্রতারিত ক্রেতা সাধারণ এই অসাধু চক্র ধ্বংস করতে দ্রুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেন । এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, সম্প্রতি এ বিষয়ে একবার অভিযান চালানো হয়েছিলো। কয়েকদিনের মধ্যে বিএসটিআই এর মাধ্যমে পূণরায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।