গ্রাম পুলিশের ভাতার টাকা পটিয়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পেটে!
নিজস্ব সংবাদদাতা
১৩ এপ্রিল, ২০২২, 10:23 PM
নিজস্ব সংবাদদাতা
১৩ এপ্রিল, ২০২২, 10:23 PM
গ্রাম পুলিশের ভাতার টাকা পটিয়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পেটে!
পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:- কোভিট-১৯ ভাইরাসের গণটিকা কর্মসূচীতে দায়িত্ব পালন করা গ্রাম পুলিশের ভাতা অনেকেই পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকায়। একাধিক ভোক্তভোগীর অভিযোগ, পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সব্যসাচী নাথ তাদের টাকাগুলো ভুয়া বিলের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। তারা জানান, গ্রাম পুলিশরা দায়িত্বপালনের বিল বাবদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা পাননি। তবে ডাঃ সব্যসাচী নাথ বলেন, দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে, আপনারাতো (সাংবাদিকরা) এ নিউজগুলো করেন না। আমাদের এই অল্প টাকা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন ?
ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে বেসরকারী সংস্থা ইউনিসেফের অর্থায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে স্বারকমূলে ২৮/১০/২১ ইং ৭.৮.৯ সেপ্টেম্বর ৩ দিনে স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মানী বাবদ ২০০ টাকা করে ৯ জনের জন্য ৫৪০০ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। অন্য এক স্বারকে ০২/১২/২১ইং মূলে ২দিনে সুষ্ঠুভাবে গণটিকা পরিচালনার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মানী বাবদ ৩৫০/- টাকা করে ৯ জনের ২ দিনের জন্য ৬৩০০ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। সর্বমোট প্রতি ইউনিয়নে ১১৭০০ টাকা বরাদ্দ হয়। যা ২ লক্ষ ৫৭ হাজার চার শত টাকা।
জঙ্গলখাইন ইউনিয়েনর গ্রাম পুলিশ নাসির উদ্দিনের অভিযোগ, ইউনিয়ন পর্যায়ে ভ্যাকসিন দিতে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের ঘোষিত সম্মানী দেওয়ার কথা ছিল। অথচ এক টাকাও সম্মানী পাইনি। একই অভিযোগ, ভাটিখাইন ইউপির গ্রাম পুলিশ মো. আলীর। তিনি জানান, আমাদের জন্য কোনো টাকা আসছে কিনা জানি না। টাকা না দিলে কেন আমাদের খাটানো হয়েছে। আমাদের মতো গরীবদের টাকা আত্মসাৎ করলে আল্লাহও তাদের ক্ষমা করবে না।
শোভনদন্ডী ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মো. সাহেদ জানান, গ্রাম পুলিশের টাকা এসেছে বলে শুনেছি, কিন্তু চোখে দেখিনি। আমরা খবর নিয়ে জেনেছি, আমাদের সম্মানীর টাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারাদের পেটে ঢুকেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ভুয়া স্বেচ্ছ্বাসেবকের নাম, স্বাক্ষর তৈরি করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃসব্যসাচী নাথ ও হিসাব রক্ষক রাজিব মজুমদার কোভিট প্রোগ্রামে দায়িত্বপালনকারী গ্রাম পুলিশদের টাকাগুলো পকেটে ভরেছে। সব্যসাচী নাথের বির“দ্ধে হাসপাতাল পরিস্কার- পরিছন্নতা, স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেনিং, বিভিন্ন জাতীয় প্রোগ্রামের টাকা আত্নসাৎ করাও বেশ অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিবাদ করলেই অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারীকে হয়রানী ও বদলীর সুপারিশ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
একইভাবে মাঠপর্যায়ে টিকাদানকারী স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীদের নামে আলাদা ৫০০ টাকা করে ২দিনের ১০০০ টাকা বিল আছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাবরক্ষক রাজিব মজুমদারের যোগসাজসে স্বেচ্ছাসেবকদের নামে বেনামে ভুয়া বিলে স্বাক্ষর তৈরি করে এমন বিল উত্তোলন করেছে বলে জানা গেছে।
কয়েকজন স্বাস্থ্য সহকারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে স্বেচ্ছাসেবকের সম্পূর্ণ টাকার বিষয়ে তারা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সব্যসাচী নাথ ও হিসাব রক্ষক রাজিব মজুমদার তাদেরকে বলেন যাও স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে এসো, ওদের হাতে টাকা দিব। তাদেরকে ২৫০০টাকা নিতে বাধ্য করেন। যা প্রতি ইউনিয়ন হিসাবে স্বাস্থ্য সহকারীদের স্বেচ্ছাসেবক বাবদ ২৫০০ টাকা করে ৭৫০০ টাকা দেয়া হয়। স্বেচ্ছাসেবকদের বাকী প্রতি ৪২০০ টাকা করে ইউনিয়নে মোট ৯২৪০০ টাকা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সব্যসাচী নাথ ও হিসাব রক্ষক রাজিব মজুমদার মিলে এই টাকা গুলো আত্নসাত করে নিজেদের পকেটে পুড়ছে।
পরিবার কল্যাণ বিভাগে কর্মরত সহকারীরা স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মানী টাকার কথা ইপিআই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আলী আকবর এর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন- এগুলো তোমাদের টাকা না, স্বেচ্ছাসেবীদের টাকা। এখনো বিল হয়নী, প্রোগ্রাম আমরা ম্যানেজ করি, পরিবার কল্যাণ সহকারী নেত্রী শাহেদা বেগম জানান- ইউনিয়ন ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন সমানভাবে কাজ করি, স্বেচ্ছাসেবীদের টাকা স্বেচ্ছাসেবকদের দিবেন, না হয় সমান করে দু'ভাগে দিবেন। প্রয়োজনে আমরা আন্দোলন করব।
বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মরত টিকাদানকারী স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীরা জানান, গণটিকা বাস্তবায়নে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে গ্রাম পুলিশ ও আনসারও ছিল। আমরা কোন রকমের বিলে স্বাক্ষর করিনি। স্বেচ্ছাসেবীদের বিলেও স্বাক্ষর নেইনি। ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারের পরিচালনায় এই টাকা গ্রাম পুলিশের/ চৌকিদারের।
হিসাবরক্ষক রাজিব মজুমদার এর কাছে অনিয়মের অভিযোগ এনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি জানি না গ্রাম পুলিশের অর্থ আত্নসাতের বিষয়ে। এগুলোর দায়িত্বে আছেন স্বাস্থ্য সহকারী আলি আকবর, তিনি তা ভাল জানবেন। তাছাড়া সেচ্ছাসেবীদের টাকা এখন দেইনি তো কি হয়েছে পড়ে দিবে আরকি।
কচুয়াই ইউনিয়ন ভ্যাকসিনেশন কমিটির সভাপতি ইনজামামুল হক জসীম জানান, কোভিড ভ্যাকসিন দিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রাম পুলিশের ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। তাদের জন্য আসা সরকারী বরাদ্দের টাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার যোগসাজসে গ্রাম পুলিশের কাছে পৌছায়নি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তিনি বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এর সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান।
উপজেলা ভ্যাকসিনেশন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, করোনার টিকা উপজেলার সব ইউনিয়নে পৌঁছে দিতে সেচ্ছাসেবী/গ্রাম পুলিশ/ আনসার বাহিনীর নিরলশ ভূমিকা ছিল। তাদের সহযোগীতায় সফলভাবে ভ্যাকসিন কার্যক্রম ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। সরকারীভাবে যে বরাদ্দ এসেছে তা নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে তিনি তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।
এবিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ ইলিয়াস চৌধুরী জানান, সরকারী বরাদ্দ নিয়ে স্বাস্থ কমপেক্সে কোন ধরনের অনিয়ম হলে তা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
#এনএল/এম.এ