NL24 News
২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, 11:18 PM
কক্সবাজারে পর্যটক ধর্ষণের ঘটনায় মামলা
কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজারে পর্যটক ধর্ষণের ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর ছয়জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ৮ টার দিকে সদর মডেল থানায় এ ঘটনায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুল গিয়াস।
আসামিরা হলেন প্রধান অভিযুক্ত আশিকুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার জয়া, বাবু ও আটক হোটেলের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। বাকি দুজন অজ্ঞাত।
ঢাকা থেকে সপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে এসে গণ ধর্ষণের শিকার হন ওই গৃহবধূ। স্বামী-সন্তানকে জিম্মি ও হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে দুইবার ধর্ষণ করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ।
গত বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাত দেড়টার দিকে কক্সবাজার কলাতলী ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামের একটি হোটেল থেকে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে র্যাব-১৫। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান র্যাব। ঘটনায় জড়িত চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান ওই নারীর বরাত দিয়ে বলেন, বুধবার সকালে ঢাকা থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন তারা। এরপর কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে ওঠেন। সেখান থেকে বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ঘুরতে যান। লাবনী পয়েন্টে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে ওই নারীর স্বামীর ধাক্কা লাগে। পরে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে সন্ধ্যায় স্টেডিয়াম সংলগ্ন পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে কয়েকজন যুবক তার স্বামী ও ৮ মাসের সন্তানকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। অপর একটি অটোরিকশায় তিন যুবক গৃহবধূকে তুলে নেয়। পরে তারা পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। সেখান থেকে তাকে ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামে একটি হোটেলে নেওয়া হয়। সেখানেও তাকে আরেক দফা গণধর্ষণ করে ওই যুবকরা। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে হোটেল কক্ষটি বাইরে থেকে বন্ধ করে পালিয়ে যায় তারা।
ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর দাবী, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খুলে ৯৯৯-এ ফোন দেন। পুলিশ তাকে থানায় এসে সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়। তারপর অপর এক ব্যক্তির সহযোগিতায় কল দেন র্যাব-১৫-কে। পরে র্যাব এসে ভুক্তভোগী গৃহবধূকে উদ্ধার করে। পর্যটন গলফ মাঠের এলাকা থেকে তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয়।
ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, ‘সামান্য ধাক্কা লাগার কারণে তারা আমার এমন ক্ষতি করবে তা কল্পনাও করিনি। শহর অপরিচিত তাই জায়গা ও তাদের চিনতে পারিনি। বারবার হাতে-পায়ে ধরলেও তারা আমার স্ত্রীকে ফেরত দেয়নি।
কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, খবর পেয়ে স্বামী-সন্তান ও গৃহবধূকে উদ্ধার করি। তদন্ত শুরু করেছি। এখন চারজনকে শনাক্ত করেছি। এরা ছিনতাই ও মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি।
এই ঘটনায় হোটেল ম্যানজারকে আটক করা হয়েছে। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ( অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) মো. আবু সালাম চৌধুরী। এর আগে হোটেলের সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে র্যাব।
এতে দেখা যায়, তিন যুবক অটোরিকশায় এক নারীকে নিয়ে আসেন। দুজন ওই নারীর সঙ্গে থাকেন। আরেকজন হোটেলের রুম বুকিং দেন। সে সময় রিসিপশনে হোটেলের ব্যবস্থাপক ছোটন ছিলেন। এরপর তিন যুবক ওই নারীকে নিয়ে ওপরে চলে যান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে যুবকরা বেরিয়ে গেলেও ওই নারীকে নামতে দেখা যায়নি।
র্যাব জানায়, এই ফুটেজ থেকে দুজনকে শনাক্তের পর ওই নারীকে তাদের ছবি দেখানো হয়। তিনি তাদের চিনতে পেরেছেন।
কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এর সাথে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন বলেছেন, ‘ঘটনার ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা হয়েছে । যেহেতু ঘটনাটি স্পর্শকাতর তাই র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও থানা পুলিশ যৌথভাবে তদন্তে নেমেছে।