NL24 News
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, 6:41 AM
ঋণের দায়ে দেউলিয়া অর্থনীতির হার ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ ড. ইউনূসের
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। বৈদেশিক ঋণেজর্জরিত অর্থনীতি। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভও এখন তলানিতে। রেমিট্যান্স আশানুরূপ হচ্ছে না। গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতেও ঘণীভূত আশঙ্কার কালো মেঘ। চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পোশাক শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি করছেন অনেকে। বৈদেশিক ঋণদাতারা বকেয়া পরিশোধের চাপ দিতেই পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও বিপুল পরিমান ঋণ সামাল দেওয়া অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে খুবই কঠিন। অর্থ ও বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরূদ্ধার ছাড়াও, বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সবচেয়ে বড় সমস্যা’। অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপাকে ফেলতে ষড়যন্ত্রের অভাব নেই। বেহাল অর্থনীতির হাত ধরে নতুন করে ষড়যন্ত্রের কৌশল চলছে।
বড় অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করাটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কঠিন সমস্যা। সেই সমস্যা আরও কঠিন হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকায়। গত ৬ বছরের মধ্যে এখনই সর্বনিম্ন বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, ১৬ বিলিয়ন ডলার। সেইসঙ্গে ৮৬ টাকার মার্কিন ডলার এখন ১২০ টাকা হয়েছে। পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে রাশিয়া। তারা বকেয়া পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ রাশিয়া কোনও অনুরোধই শুনছে না।
সর্বশেষ পাওয়া সরকারি তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ঋণের ভারে জর্জরিত। জাপানের কাছ থেকে ৯.২১ বিলিয়ন ডলার ধার করেছে বাংলাদেশ। রাশিয়ার কাছে ধারের পরিমান ৫.০৯ বিলিয়ন ডলার। চীনের কাছে ৪.৭৬ বিলিয়ন এবং ভারতের কাছে ১.০২ বিলিয়ন ডলার ঋণী বাংলাদেশ। বাস্তবে ঋণের পরিমান আরও বেশি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর তথ্য অনুযায়ী২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৫৬৩ কোটি ডলার ঋণ করেছে। এই ঋণের কিস্তি শোধ করতে হবে ড. ইউনূসকেই।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস খুব ভালোই জানেন কী বিপুল পরিমাণ ঋণের দেশের কাঁধে চেপেছে। ১৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি ঋণ রেখে বিদায় নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।রূপপুর প্রসঙ্গে তার অনুমান, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মেটাতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। তিনি বলেছেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রিমের অর্থ পরিশোধ এবং বকেয়া পাওনা নিয়ে রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আলোচনা চলছে’।তবে রাশিয়া জানিয়েছে, সুদ ও বকেয়া আদায়ে কোনও ছাড় তারা দেবে না।
রাশিয়ার পাশাপাশি চীনও বকেয়া আদায়ে সচেষ্ট। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী জানিয়েছেন, চলমান চীনা ঋণের সুদের হার এক শতাংশে নামিয়ে আনতে ও ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে চীনকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।কিন্তু সেই অনুরোধে এখনও কোনও সাড়া দেয়নি বেজিং। নিজেরদেশের আর্থিক ক্ষতি করে চীন কখনও অন্য দেশের উপকার করে না। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের হাল সকলেরই জানা আছে। চীনের চাপও সহ্য করতে হচ্ছে ড. ইউনূসকে।
কিছু আন্তর্জাতিক সহায়তার বন্দোবস্ত হলেওসেটা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরকালে সুশাসন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সক্ষমতা বাড়াতে ২০ কোটি ডলার সহায়তার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশকে শর্ত সাপেক্ষে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে বিশ্বব্যাংক। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও১৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে পারে। ডিসেম্বরের মধ্যেই তারা বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪০ কোটি ডলার দেবে বলেছে। সাধারণ দৃষ্টিতে এই সহায়তাকে বিপুল বলে মনে হতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক সঙ্কটেএই অর্থ কিন্তু খুবই সামান্য। বেহাল অর্থীনিতিতে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে। সেই দুর্ভোগ থেকে ফের মানুষের ক্ষোভ অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বাজাতে পারে বলে এখন থেকেই অনেকে পেখম মেলতে শুরু করেছেন।