NL24 News
০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, 2:28 PM
ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিনিধি : নরসিংদীর এক যুবক লিবিয়া থেকে নৌকায় সাগরপথে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহত যুবকের নাম মো. রাশেদুল ইসলাম (২০)। তিনি বেলাব উপজেলার সল্লাবাদ ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের মো. আবদুর রউফ মিয়ার ছেলে।
দূতাবাসের মাধ্যমে পাসপোর্ট ও লাশের ছবি দেখে নিহতের পরিবারের সদস্যরা তাকে শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ আছেন একই এলাকার আরও দুই যুবক।
এ ঘটনায় নিখোঁজ দুজন হলেন, একই গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে শরীফুল ইসলাম (২২) ও ইউনুস মিয়ার ছেলে সালাহ উদ্দিন (৩৫)। তারা তিনজনই পরস্পর দূরসম্পর্কের আত্মীয় এবং সালাহ উদ্দিনের মাধ্যমেই রাশেদুল ও শরীফুল সাড়ে আট লাখ টাকা করে দিয়ে অবৈধভাবে ইটালির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন।
নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ২৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৩টার দিকে লিবিয়ার একটি সৈকত থেকে নৌকায় করে ইতালির উদ্দেশে অবৈধভাবে রওনা হয় একটি দল।
এর তিন দিন পর রোববার দুপুরে লিবিয়ার দূতাবাস থেকে লাশের সঙ্গে পাওয়া একটি পাসপোর্টের বরাত দিয়ে রাশেদুলের মৃত্যুর খবর তার পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়।
নিহত রাশেদুলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাশেদুল দ্বিতীয়। বাবা কৃষিকাজ করেন। রাশেদুল স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন পার্শ্ববর্তী ভৈরবের হাজি আসমত আলী কলেজে। কিছুদিন কলেজে যাওয়া-আসার পরই পড়ালেখায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন তিনি।
দীর্ঘদিনের চেষ্টায় কৃষক বাবাকে ইটালি যাওয়ার ব্যাপারে রাজি করান তিনি। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা ঋণ করে তার হাতে দেন বাবা। পরে সালাহ উদ্দিনের মাধ্যমে রায়পুরার আদিয়াবাদ এলাকার মনির নামের এক দালালের হাতে তুলে দেন ওই টাকা। তারা আরও জানান, গত ৩ ডিসেম্বর ইটালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হন তারা তিনজন। প্রথমে পাড়ি জমান লিবিয়ায়।
সেখানে দেড় মাস থাকার পর দালালের লোকজন ইতালি নেওয়ার অংশ হিসেবে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তাদের নিয়ে যায় লিবিয়ার ত্রিপোলি শহরে। সেখানে ১৫ দিন অবস্থানের পর গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে নৌকাপথে পাড়ি জমান ইতালির উদ্দেশে।
পরে গত রোববার দুপুরে লিবিয়া দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা তাদের ফোন করে জানান, অবৈধভাবে নৌকায় ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ঠান্ডায় জমে মারা যান রাশেদুল। ওই যাত্রায় রাশেদুলের সঙ্গেই ছিলেন শরীফুল ইসলাম ও সালাহ উদ্দিন। ঘটনার পর থেকে তারা দুজন নিখোঁজ।
নিহত রাশেদুলের বড় ভাই মো. আশিক মিয়া বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে ইটালির উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়েছিল। তখন দোয়া চেয়ে বলেছিল, “কিছুক্ষণ পরেই রওনা হব, একটু পরই মোবাইল বন্ধ করে দেব। সবাই আমার জন্য দোয়া করো।”
এর তিন দিন পর রাশেদুলের পাসপোর্টের সূত্র ধরে দূতাবাস থেকে ফোন করে তার মৃত্যু খবর জানায় আমাদের। আমরা ভেবেছিলাম, পাসপোর্টটি তার কাছে না থেকে অন্য কারও কাছেও তো থাকতে পারে। তাই লাশের ছবি দেখতে চেয়েছিলাম আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমাদের লাশের ছবি দেখানো হলে আমরা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হই। সংসারের অভাব দূর করার জন্য ইটালি যেতে চেয়ে তাকেই হারিয়ে ফেললাম আমরা। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তার লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।’
এদিকে নিখোঁজ সালাহ উদ্দিনের বড় ভাই কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থানার উপপরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অসমর্থিত একটি সূত্রে জানতে পেরেছি, সালাহউদ্দিন ও শরীফুলসহ আরও অভিবাসনপ্রত্যাশীকে একটি কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে ঠিক কী হয়েছে, আমরা তা নিশ্চিত হতে চাই। সালাহ উদ্দিন এলাকায় ফার্মেসির ব্যবসা করত। এসএসসি পাস করার পর আর লেখাপড়া করেনি। তার স্ত্রী ও দুই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।’
অন্যদিকে নিখোঁজ শরীফুল ইসলামের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মূলত সালাহ উদ্দিনের প্ররোচনায় আমার ছেলে শরীফুল ইতালি যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। সে ২০২০ সালে ভৈরবের হাজি আসমত আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শরীফুল তৃতীয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে দোয়া চেয়েছিল সে। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি আমাদের। আমি আমার ছেলের খোঁজ চাই।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন শাহীন বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তার লাশ দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে আমার কাছ থেকে নেওয়া একটি প্রত্যয়নপত্র তাদের দরকার হবে। আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি।’
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে ইটালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে অতিরিক্ত ঠান্ডায় সাত বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর জানা যায়। নিহতদের একজন ছিলেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বেগনাবাজ এলাকার মুদি দোকানি আয়েস আলীর ছেলে সাইফুল মিয়া (২২)।