নিজস্ব সংবাদদাতা
২০ জুন, ২০২২, 12:11 AM
আসুন, বন্যার্তদের মানবিক হাত বাড়িয়ে দিই
মোরশেদ আলমঃ- দেশের ১৬টি জেলায় এখন বন্যা হয়েছে। বিগত শত বছরের ইতিহাসে এই বন্যা খুবই ভয়ানক। বন্যা কবলিত এলাকার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্ধী হয়েছে পড়েছে। হাহাকার করছে আজ সৃষ্টির সেরা মানুষগুলো। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এক অঞ্চলের সাথে আরেক অঞ্চলের।চারিদিকে পানি আর পানি।
বন্যার পানিতে ধ্বংস হয়েছে ঘরবাড়ি, তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। মাঠের ফসল, ধান ক্ষেত আর তরিতরকারি সবই পানিতে ডুবে ধ্বংস হয়েছে। গোলার ধান, গোয়ালের গরু আর ছাগল সবই ক্ষতিগ্রস্ত। ধ্বংস হয়েছে কয়েক শত পোল্ট্রি খামার। পানিতে ভেসে গেছে হাজারো হাঁস-মুরগি। বন্যার পানিতে হাজার হাজার মাটির ঘর ধসে পড়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির ফসল। মাছের খামার সমুহ ডুবে যাবার কারণে ভেসে গেছে শত কোটি টাকার মাছ। পানিতে ভেসে গেছে হাজারো গবাধি পশু। রাস্তাঘাট, বসত বাড়ি, স্কুলের মাঠ সবই পানির নিচে। মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির-গির্জা সবটার ভিতরেই পানি। বাড়ির বাইরেও পানি, ভেতরেও পানি। দাঁড়ানোর জন্য কোথাও একটু শুকনো জায়গা নেই। বসার এবং ঘুমানোর জন্যও কোথাও একটু জায়গা নেই। সব মিলিয়ে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষরা আজ সীমাহীন কষ্টের মধ্যে আছে।
তারা আজ মাতৃত্বহীন, পিতৃত্বহীন সন্তানদের মত অকাতরে চোখের জল ফেলছে। তারা কি জানতো আধো এমন পরিস্থির সম্মুখীন হতে হবে? তারা কি জানতো ঘর, বাড়ি, সব কিছু ফেলে নিজেদের জান বাচাতে হামাগুড়ি দিতে হবে?
সন্তানের শেষ আশ্রয়স্থল তার অভিভাবক, কিন্তু পানির উচ্চতা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় সন্তানের জীবন বাঁচাতে বাবা মা হাঁড়ি-পাতিলের ভেতরে বসিয়ে পানিতে ভেসে দিচ্ছে; যেন সন্তানের ক্ষতি না হয়। আবার অনেকে বন্যার ভয়াবহ প্রকোপে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অবস্থান নিয়েছে। শিশু, বয়োবৃদ্ধের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কষ্ট বেশি।
সিলেট, সুনামগঞ্জের অধিকাংশ অঞ্চলের নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কেউ চাইলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না।
দেশের ১৬ জেলায় পানির উচ্চতা এত প্রবল বেগে বাড়ছে যে, এখন সেই দাঁড়ানোর মতো জায়গাটুকুও অবশিষ্ট নেই। এখন এই অসহায় বানভাসি মানুষদের বেশি জরুরি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অভিযান না হলে তারা কঠিন বিপদের মুখে পড়বে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীগুলো উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে। কিন্তু তাদের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। সেই সাথে আমাদের সকলকে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে।
এই মুহুর্তে পানিবন্ধী মানুষদের রান্না করে খাবার তৈরির সুযোগ কোথাও নেই। যার কারণে শুকনো রুটি, বিস্কুট, মুড়ি আর চিড়া খেয়েই জীবন চালাতে হচ্ছে। এক কথায় ত্রাণের সাহায্যের ওপর নির্ভর করেই বেঁচে আছে জীবন। এই মুহূর্তে মানুষ হিসেবে যার যার সার্ধ অনুযায়ী তাদের দিকে আমাদের মানবিক হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
একজন মানুষ হিসেবে আমাদের সকলের মানবিক গুনাবলি আছে যাদের মানবিক গুনাবলী নেই তারা মানুষ নয়। যারা আজ বন্যার পানিতে ভাসছে তারা আমাদের ভাই, কেউ আমাদের মা, বোন। এই চরম বিপর্যয়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়ায় কে দাঁড়াবে?
সরকার যে ত্রান সামগ্রী দিচ্ছে তা এই মুহুর্তে যতেষ্ট নয়। সারা দেশের সার্মথ্যবান মানুষেরা যদি আজ নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসে তাহলে এই দুর্যোগকে মোকাবেলা করা কঠিন এবং অসম্ভব নয়। আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে এসব দুর্গত মানুষেরা অচিরেই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে, একথা আমি দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি।
আসুন বন্যাদুর্গত মানুষদেরকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করি। তারা যেন আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে। মানুষ হিসেবে আসুন মানবতার হাতটা তাদের দিকে বাড়িয়ে দিই।
মোরশেদ আলম
গনমাধ্যমকর্মী ও কলামিস্ট।
#এনএল