রাজাপাকসেদের কে কোথায়
১৪ জুলাই, ২০২২, 3:58 PM

NL24 News
১৪ জুলাই, ২০২২, 3:58 PM

রাজাপাকসেদের কে কোথায়
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে চলমান প্রবল গণবিক্ষোভের মুখে কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকার পর পদত্যাগ না করেই মালদ্বীপ পালিয়ে যান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে স্ত্রী, একজন দেহরক্ষীসহ চার যাত্রীকে নিয়ে একটি সামরিক উড়োজাহাজে করে মালদ্বীপে পালিয়ে যান তিনি।
তবে দেশত্যাগের আগে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে যান। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে সংবিধানের ৩৭ ধারার ১ অনুচ্ছেদের আওতায় তাকে এই নিয়োগ দিয়েছেন বলে গতকাল বুধবার জানান দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে।
এদিকে, দায়িত্ব পেয়ে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ও কারফিউ জারি করেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। এতে বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে গোতাবায়া ও রনিলের পদত্যাগ দাবি করেছেন। কিন্তু পদত্যাগ না করে নতুন দায়িত্ব পাওয়া রনিল সেনাবাহিনীকে শৃঙ্খলা ফেরাতে ‘যা করা দরকার, তা–ই করার’ নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে দেশটিতে পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে।
এবার জানা যাক, রাজাপাকসে পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় আছেন-
গোতাবায়া রাজাপাকসে
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে মালদ্বীপ ছেড়েছেন। তাদের সঙ্গে আছেন দুই নিরাপত্তারক্ষী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সৌদি এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে তিনি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে মালদ্বীপ ছাড়েন বলে শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর অনলাইন জানিয়েছে।
২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পাওয়া গোতাবায়া রাজাপাকসে (৭৩) একাধিকবার দেশ ছাড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে মালদ্বীপে পালিয়ে যান। গত মঙ্গলবার রাতে একটি সামরিক বিমানে স্ত্রী, দুই দেহরক্ষীসহ মালদ্বীপে যান তিনি।
মাহিন্দা রাজাপাকসে
গোতাবায়া রাজাপাকসের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে (৭৬)। গত মে মাস পর্যন্ত তিনি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু চরম আর্থিক দুর্দশা নিয়ে শ্রীলঙ্কায় গণবিক্ষোভের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। গত ৯ মে তার সমর্থকেরা বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। এর জেরেই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন মাহিন্দা। এ নিয়ে একটি মামলার কারণে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছেন আদালত।
শ্রীলঙ্কা ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাহিন্দা এখন শ্রীলঙ্কার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি নৌঘাঁটিতে রয়েছেন।
বাসিল রাজাপাকসে
মাহিন্দা রাজাপাকসের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী ছিলেন তার ভাই বাসিল রাজাপাকসে (৭১)। গত ১২ জুলাই গোতাবায়া ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বাসিলা। কিন্তু গোতাবায়া পারলেও বাসিল দেশ ছাড়তে পারেননি।বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের আপত্তি ও ইমিগ্রেশন কর্মীদের বাধার কারণে দেশ ছাড়তে পারেননি বাসিল। ‘চেক ইন’ করতে না পেরে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আবার কলম্বোয় ফিরে আসেন তিনি। বাসিল রাজাপাকসে দেশেই অজানা স্থানে আত্মগোপনে আছেন বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমগুলো।
নামাল রাজাপাকসে
শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে পরিবারের আরেক প্রভাবশালী সদস্য নামাল রাজাোকসে (৩৬)। মাহিন্দা রাজাোকসের ছেলে নামাল শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট সদস্য। মাহিন্দার মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী। মাহিন্দা রাজাপাকসের দেশত্যাগে আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন নামাল। দেশ ছাড়ার কোনো ইচ্ছা নেই বলে দাবি করেছেন তিনি। নামাল দেশ ছাড়ার চেষ্টাও করেননি।
শ্রীলঙ্কা ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নামাল রাজাপাকসে এখন কলম্বোয় তার বাসভবনে আছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত শ্রীলঙ্কা। ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মুখে পড়ে দেশটি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধেও ব্যর্থ হয়েছে। দেশের এ পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং তার পরিবারকে দায়ী করে আসছে শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা।