মার্কিন নির্বাচনের আগেই কৌশলগত সাফল্য নিশ্চিত করতে চায় ইসরায়েল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯ অক্টোবর, ২০২৪, 11:04 AM

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯ অক্টোবর, ২০২৪, 11:04 AM

মার্কিন নির্বাচনের আগেই কৌশলগত সাফল্য নিশ্চিত করতে চায় ইসরায়েল
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু করা হামলার নেপথ্য কারিগর হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুকে বড় বিজয় হিসেবে দেখছে ইসরায়েল। তবে শুধু সামরিক জয়ে সন্তুষ্ট নয় তারা, ইসরায়েলি নেতারা এমন কিছু কৌশলগত অর্জন নিশ্চিত করতে চাইছেন যা অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা পরিবর্তন করবে এবং তাদের সীমান্ত নিরাপদ করবে। বিষয়টির সঙ্গে জড়িত সূত্রগুলোর বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ইসরায়েল গাজা এবং লেবাননে হামাস ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করছে। যাতে করে নতুন প্রেসিডেন্টের শপথের আগেই একটি অপ্রতিরোধ্য বাস্তবতা তৈরি করা যায়। আটজন সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, তারা কার্যত বাফার জোন সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
ইসরায়েলের কৌশলগত লক্ষ্য হলো, শত্রুপক্ষ ও তাদের পৃষ্ঠপোষক ইরান যেন পুনরায় সংগঠিত হয়ে ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর হুমকি সৃষ্টি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। পশ্চিমা কূটনীতিক, লেবানিজ ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, এ জন্যই সামরিক অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশা করছেন সিনওয়ারের মৃত্যুকে কাজে লাগিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজায় যুদ্ধ থামানোর জন্য চাপ দেওয়া যাবে। তবে নেতানিয়াহু হয়তো বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পছন্দ করবেন। ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বা তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করবেন। ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
যেকোনও অস্ত্রবিরতি চুক্তি বিবেচনার আগে ইসরায়েল নিজের উত্তরের সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা জোরদার করছে। একইসঙ্গে তারা গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে পুনরায় প্রবেশ করছে। এটিকে উত্তর গাজাকে পুরো উপত্যকা থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ফিলিস্তিনিরা ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো।
১ অক্টোবর ইরানের দ্বিতীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েলের।
গত মাসে লেবাননে শুরু করা স্থল অভিযানে হিজবুল্লাহকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পিছু হটিয়ে লিটানি নদীর ওপারে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন ১৭০১ বাস্তবায়ন এবং সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে।
হিজবুল্লাহ অস্ত্র সমর্পণে রাজি নয়। ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকে তারা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়ে নিয়মিত গুলি বিনিময়ে লিপ্ত রয়েছে। ইসরায়েলের মতে, রেজুলেশন ১৭০১ কার্যকর করতে এবং উত্তরের প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামরিক পদক্ষেপ জরুরি।
ইসরায়েলি সেনারা হিজবুল্লাহর অবস্থান ও অবকাঠামো ধ্বংস করতে চাইছে। এতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। বিস্তৃত অভিযান দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
ইসরায়েল গাজার সীমানার পাশেও বাফার জোন তৈরির পরিকল্পনা করছে। গাজার জাবালিয়া অঞ্চলে অভিযান নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ইসরায়েল হয়তো গাজাবাসীদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে।
ইরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। ইসরায়েল প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে নতুন ফ্রন্ট খোলার ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
মার্কিন প্রশাসন গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি এবং অস্ত্রবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে। যদিও নেতানিয়াহু এখনই যুদ্ধ থামানোর পরিকল্পনা করছেন না।
নেতানিয়াহু মনে করেন, আমেরিকান নির্বাচনের আগে কোনও ধরনের কৃতিত্ব বা সুবিধা তিনি দিতে চান না। যুদ্ধ জিতেই নতুন আঞ্চলিক বাস্তবতা তৈরির পথে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।