দিল্লিতে গোশতের দোকান বন্ধের নির্দেশ নিয়ে বিতর্কের ঝড়
০৬ এপ্রিল, ২০২২, 11:57 PM

NL24 News
০৬ এপ্রিল, ২০২২, 11:57 PM

দিল্লিতে গোশতের দোকান বন্ধের নির্দেশ নিয়ে বিতর্কের ঝড়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের রাজধানী দিল্লিতে হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব নবরাত্রির উপলক্ষ্যে দিনে মাংসের দোকান বন্ধ রাখতে নগর কর্তৃপক্ষের এক নির্দেশের পর বহু দোকানে গত দুদিন ধরে গোশত বিক্রি বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার পর এ নিয়ে সেখানে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
দিল্লির দক্ষিণ ও উত্তরের মেয়ররা যুক্তি দিয়েছেন নবরাত্রির সময় সিংহভাগ হিন্দু মাছ-গোশত অর্থাৎ আমিষ খান না, এবং অনেকে তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন দোকানে গোশত দেখে তারা অস্বস্তিতে ভোগেন।
তবে প্রচুর মানুষ, এমনকি অনেক হিন্দুও, গোশত বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে তাদের ক্ষোভ সোশ্যাল মিডিয়াতে জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তে ভারতের বহুত্ববাদ লঙ্ঘিত হয়েছে।
মহিষাসুরের বিরুদ্ধে লড়াইতে হিন্দু দেবী দুর্গার বিজয় উদযাপন উপলক্ষে ৯ দিন ধরে নবরাত্রি উদযাপন করা হয়। ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের অনেকে এ সময়ে গোশত খান না। অনেকে এমনকি পেঁয়াজ-রসুনও খান না।
দিল্লির সরকার চালায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। তারা গোশতের দোকান বন্ধ রাখা নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
যে দুই মেয়র ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গোশতের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছেন তারা ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির রাজনীতির সাথে জড়িত।
এই নির্দেশের কড়া সমালোচনা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকে বলছেন, কারো গোশত না খাওয়ার যুক্তিতে অন্যের গোশত খাওয়ার অধিকার বা অন্যের জীবিকার অধিকার লঙ্ঘন করা যায় না।
ভারতের পার্লামেন্ট লোকসভার সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী মহুয়া মৈত্র তার এক টুইটে লিখেছেন, ‘ভারতের সংবিধান আমার খুশিমতো যেকোনো সময়ে খাওয়ার অধিকার দিয়েছে।’ জম্মু ও কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ তার এক টুইটে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন - তাহলে কি রোজার মাসে মুসলিম প্রধান এই রাজ্যে সমস্ত অমুসলিম এবং পর্যটকদের জনসমক্ষে খাওয়া নিষিদ্ধ করে দেয়া যাবে?
অনেকে আবার প্রশ্ন করছেন, অনেক হিন্দু যখন নবরাত্রিতে পেঁয়াজ-রসুনও ছোঁন না, তাহলে সেগুলোর বিক্রি কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। ‘শুধু গোশতের বেলায় এই সিদ্ধান্ত কেন?’
টুইটারে একজন লিখেছেন, ‘হোটেলে গিয়ে গোশত খাওয়া চলবে। অনলাইনে বিক্রেতারা গোশত সরবরাহ করতে থাকবেন। কিন্তু গরীব মুসলিমদের গোশতের দোকান খোলা রাখলেই শুধু হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে।’
দক্ষিণ দিল্লি পৌর করপোরেশনের মেয়র মুকেশ সুরায়ান ৪ এপ্রিল এক চিঠিতে বলেন, ‘ভক্তরা যখন পূজা দিতে যাওয়ার সময় গোশতের দোকানের পাশ দিয়ে যান, সেসব দোকান থেকে আসা গন্ধ যখন তাদের নাকে যায়, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুভূতিতে আঘাত লাগে।’
মুকেশ সুরায়ান বলেন, ‘নবরাত্রির সময়, দিল্লির ৯৯ শতাংশ বাড়িতে এমনকি পেঁয়াজ-রসুনও ব্যবহার করা হয় না। সুতরাং দক্ষিণ দিল্লিতে গোশতের দোকান খোলা থাকতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি বলেন, নির্দেশ অমান্য করলে জরিমানা করা হবে।
পূর্ব দিল্লির মেয়র শ্যাম সুন্দর আগারওয়াল বলেন, ‘যদি কেউ এ সময়ে গোশত বিক্রি করেন, সেই গোশত হয় পচা হবে - না হয় অবৈধভাবে জবাই করা পশুর গোশত হবে। সুতরাং আমি ১৬টি পর্যবেক্ষণ দল গঠন করে দিয়েছি যারা এ ধরনের গোশত ব্যবসায়ীর ওপর নজর রাখবে এবং প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা নেবে।’
গোশতের দোকান বন্ধ রাখার জন্য দক্ষিণ দিল্লি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেক দোকান মালিক এমন কোনো নির্দেশনা না পেলেও ভয়ে তারা বন্ধ রেখেছেন বলে রিপোর্ট করেছে ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
দক্ষিণ দিল্লিতে প্রায় ১৫০০ নিবন্ধিত গোশতের দোকান রয়েছে। যদিও সাধারণ একটি বিশ্বাস রয়েছে যে ভারতের সিংহভাগ মানুষই গোশতভোজী নন, কিন্তু গবেষণা বলছে সে দেশের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ নিরামিষাশী।
ভারতের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই হিন্দু এবং তারাই গোশতের প্রধান ভোক্তা।রাজধানী দিল্লির বাসিন্দাদের বড়জোর এক-তৃতীয়াংশ নিরামিষাশী, এবং দিল্লি ভারতের ‘বাটার-চিকেন ক্যাপিটাল’ বলে খ্যাতি পেয়েছে।