কক্সবাজার-টেকনাফ প্রধান সড়ক ঘেঁষে ও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীনদের জন্য সরকারিভাবে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের এসব ঘর নির্মাণ ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রামু উপজেলার মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পানের ছড়া এলাকার বিস্তীণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ এবং প্রধান সড়ক থেকে ১৫ থেকে ২০ ফুট দূরত্বে ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০ থেকে ৩০ জন নির্মাণ শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে ২০টির মতো ঘরের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানের ছড়ায় ‘মৃত্যুকূপ’ বলে পরিচিত ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। তারা আরও জানান, গত বছর বর্ষায় এ স্থানে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় ১০ থেকে ১২টি পরিবারকে সরিয়ে নেয় প্রশাসন। একই স্থানে ঘরগুলো নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল উদ্বিগ্ন। নাম প্রকাশ না করে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশে ‘মৃত্যুকূপ’ বলে পরিচিত স্থানে ঘর নির্মাণ করে প্রকল্পটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য তিনি দাবি জানান। এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে স্থানীয় সচেতন মহল ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনও (বাপা) ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। যদিও প্রশাসনের দাবি, সেখানে পাহাড়ধসের কোনো আশঙ্কা নেই।
রামু উপজেলা প্রশাসন জানায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ১৮৬টি পরিবারকে ঘর উপহার দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে ৩০ পরিবারের জন্য ওই পাহাড় পাদদেশে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাপার কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ফজুলল কাদের চৌধুরী বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঘরগুলো নির্মাণ করে ভূমিহীনদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এর তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি আরও বলেন, আর্থিকভাবে কিছুটা ক্ষতি হলেও নিরাপদ কোনো জায়গায় ঘরগুলো পুনরায় নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাচ্ছি।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ নাজমুল হক বলেন, পাহাড়ের পদদেশে ভূমিহীন ঘর নির্মাণের বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই শুনছি। আমি ঘটনাস্থলে যাব। পরিবেশ আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করা হবে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, পাহাড়ধস নিয়ে অনেক পর্যবেক্ষণ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সেখানে ৩০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। পাহাড়ধসের কোনো আশঙ্কা নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অবগত বলে তিনি জানান। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমিন আল পারভেজ বলেন, খোঁজ নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারব।